আশুরা ও কারবালা pdf download, আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল বই pdf download, ashura o karbala pdf |
আশুরার রোজা ও মানুষের প্রকার
প্রথম প্রকার:
যারা সহীহ হাদিসের ভিত্তিতে নবম ও দশম তারিখ রোজা রাখেন এবং গত এক বছরের পাপরাজি মাফের জন্য আল্লাহর কাছে আশা করেন। আর এরাই হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে সঠিক আকিদার মানুষ ।
দ্বিতীয় প্রকার :
যারা আহলে বাইত (নবী পরিবার ও তাঁর বংশধর)-এর মিথ্যা ভালবাসার দাবিদার। এরা আশুরাকে হুসাইন (রাঃ)-এর ইরাকের কারবালার প্রান্তে স্বপরিবারে মর্মান্তিক শাহাদাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে থাকে। এরা আশুরাকে দুঃখ, মাতম ও তাজিয়া দ্বারা শোকের দিন হিসাবে নির্দিষ্ট করে। আর অনেক জাল হাদীস বানিয়ে পবিত্র আশুরার রোজাকে মানসূখ তথা রহিত ও পাপের কাজ বলে উল্লেখ করে । জাল হাদীস যেমন:
১.“ইমাম রেজাকে আশুরার রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: এ দিনে এজিদ পরিবার হুসাইন (রাঃ) ও তাঁর পরিবারের শাহাদাতে আনন্দ-উল্লাস করে রোজা রেখেছিল । অতএব, যে এই দিনে রোজা রাখবে সে কিয়ামতের দিন বক্র অন্তর নিয়ে উপস্থিত হবে।
২.“যে এই দিনে রোজা রাখবে তার অবস্থা এজিদের পরিবারের অবস্থা হবে। অর্থাৎ জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
তৃতীয় প্রকার:
যারা দ্বিতীয় দলের বিপরীত করতে গিয়ে বহু জাল হাদীস গড়েছে এবং রোজা না রেখে খানাপিনা, আনন্দ ও উল্লাসের দিন বানিয়েছে আশুরাকে। আর তাদের বানানো যঈফ-জাল হাদীসের মধ্যে । যেমন:
১. যে ব্যক্তি তার পরিবারের জন্য আশুরার দিন পর্যাপ্ত খানাপিনার ব্যবস্থা করবে আল্লাহ তার সমস্ত বছরের রুজিতে স্বচ্ছলতা দান করবেন।
২. যে ব্যক্তি আশুরার দিনে চোখে সুরমা লাগাবে, সে বছর তার চোখ উঠবে না (চক্ষুপ্রদাহে আক্রান্ত হবে না) আর যে আশুরার দিনে গোসল করবে সে বছর তার কোন অসুখ হবে না।
কারবালার মর্মান্তিক ইতিহাস
আমাদের নিকট সুস্পষ্ট যে, কারবালার ইতিহাসের সাথে আশুরার রোজার কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু ঘটনা চক্রে হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের মর্মান্তিক ঘটনা দশই মোহররমেই ঘটেছিল ।
হুসাইন (রাঃ)-এর কারবালার প্রান্তে শাহাদাতের ইতিহাসে প্রবেশ করার পূর্বে আমরা আপনাদেরকে একটু আগের পর্বে নিয়ে যেতে চাই । ইসলামের তাওহিদী পতাকা যখন আল্লাহর
জমিনে পত্পত্ করে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উড়তে শুরু করল, তখন ইসলাম ও মুসলিমদের চিরশত্রু ইহুদি-খ্রীষ্টানরা বসে না থেকে, ইসলাম ও মুসলিম জাতির ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন প্রকার চক্রান্ত ও পলিসি হাতে গ্রহণ করা আরম্ভ করল। এর মধ্যে ইয়েমেনের অধিবাসী মুনাফেক আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার ইসলামি পোশাক ধারণ করা ছিল সবচাইতে মারাত্মক। সে একজন ইহুদির সন্তান ছিল। এই মুনাফেকের মুসলিম রূপে আবির্ভাব হওয়ায় পরে ইসলামের মূল শিকড় কাটার জন্য সর্বপ্রথম পরিকল্পনা ছিল, উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) কে হত্যা করা। তাই খলিফার বিরুদ্ধে মিথ্যা কিছু অপবাদ দিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা এবং কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
মাত্র ১৪ জন কুচক্রী সাবায়ী দল তৃতীয় খলিফা যুননূরাইনকে হত্যা ছিল হিজরি ৩৫ সালে। তিনি এ হত্যাকে নিজেই মেনে নিয়েছিলেন এ বলে যে, “আমার কারণে মুসলমানদের মাঝে যেন রক্তপাত ও খুনাখুনি না ঘটে।
তিনি এ বিদ্রোহের প্রতিবাদকারীদেরকে রক্ত প্রবাহিত হবে বলে সাবাইকে চলে যেতে বলেন। তাঁর এ শাহাদাতের দ্বারা ফেত্নার দরজা উন্মুক্ত হয় এবং মুসলমানদের ঐক্যের মাঝে ফাটল ধরে। এরপর সবার ঐক্যমতে খলিফা নির্বাচিত হলেন আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ)। কুচক্রীদল আলী (রাঃ)-এর সৈন্যদলে কৌশলে প্রবেশ করে এবং তলে তলে তাদের কুমতলব চালাতেই থাকে ।
এদিকে মু'আবিয়া (রাঃ)-তখন সিরিয়ার গভর্নর নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর বংশের খলিফা উসমান (রাঃ)-এর হত্যার সঙ্গে জড়িত খুনিদের বিচার করার জন্য আলী (রাঃ)-এর প্রতি জোরালো চাপ সৃষ্টি করেন। তবে তিনি আলী (রাঃ)-এর খেলাফত বা তাঁকে অস্বীকার এবং খলিফার বিরুদ্ধে কোন প্রকার বিদ্রোহ করেননি ।
মু'আবিয়া (রাঃ)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: আপনি কি আলী (রাঃ)-এর খেলাফতের ব্যাপারে বিরোধিতা করছেন? আপনি কি তাঁর অনুরূপ? উত্তরে মু'আবিয়া (রাঃ)বলেন: আমি অবশ্যই জানি আলী (রাঃ) আমার চাইতে উত্তম এবং খেলাফতের বেশি হকদার। কিন্তু তোমরা কি জান না! উসমান (রাঃ)-কে মজলুম অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে? আর আমি তাঁর চাচার ছেলে? আমি তো শুধুমাত্র তাঁর খুনের বদলা চাই নিঃসন্দেহে একজন আত্মীয় হিসাবে মু'আবিয়া (রাঃ) উসমান (রাঃ)-এর খুনিদের বিচার দাবি করার অধিকার ছিল। কিন্তু আলী (রাঃ) একজন বড় মানের রাজনীতিবিদ ও বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন।
তাই তিনি বললেন: রাষ্ট্রের অবস্থা বর্তমানে নাজুক । এ পরিস্থিতিতে খুনিদের বিচারকার্য বাস্তবায়ন করা কঠিন। প্রথমে রাজ্যের বিশৃঙ্খলা ও ফেত্না আয়ত্বে আনতে হবে তারপর বিচার করা হবে।
অন্য দিকে পরিস্থিতি শান্ত করার উদ্দেশ্যে কিছু সাহাবীগণের পরামর্শে মা আয়েশা (র:) মক্কা হতে বাসরার দিকে রওয়ানা হন। কিন্তু অবস্থা বড় কঠিন দেখে তিনি অবাক হয়ে পড়েন। পথে আলী (রাঃ)-এর সাথে আলোচনার পর তিনি মদিনায় ফিরে যাওয়ার সংকল্প করেন। কিন্তু ঐ কুচক্রীদলটি রাত্রে অতর্কিতভাবে মা আয়েশা (রা:)-এর সঙ্গীদের উপর হামলা চালায় । যার ফলে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে ।
ঐ দিকে মু'আবিয়া (রাঃ) তাঁর মতের উপরেই অনঢ় থাকেন। অন্যদিকে আলী (রাঃ) মু'আবিয়া (রাঃ) কে বাধ্য করার জন্য মদিনা থেকে বের হন। সিরিয়ার সিফফীন নামক স্থানে পৌঁছলে সেখানে দু'দলে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পরিশেষে দু'দলের মাঝে সন্ধি দ্বারা সমস্যার সমাধান হয়। এ সন্ধিকে কেন্দ্র করে আলী (রাঃ)-এর দলের লোকেরা দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি শিয়া তথা নিজের দল। আর অপরটি খারেজী তথা বিদ্রোহী দল । আর এটাই ছিল ইসলামে সর্বপ্রথম দলাদলির সূচনা ।
ঐ ইহুদি মুনাফেক দলটি গোপনে গোপনে ইসলামের বিদ্বেষ আরো শক্তিশালী করার জন্য গোপনে ষড়যন্ত্র আঁটে। তারা তিনজন মানুষকে নিযুক্ত করে তিনজনকে হত্যা করার জন্য। খারেজী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজেমকে আলী (রাঃ) কে হত্যা করার জন্য এবং অপর দু'জনকে মু'আবিয়া ও আমর ইবনে ‘আস (রাঃ) কে হত্যা করার জন্য। কিন্তু ইবনে মুলজেম আলী (রাঃ) কে হত্যা করতে সক্ষম হলেও অপর দু'জন ব্যর্থ হয় । ইহা ছিল ৪০ হিজরির ঘটনা।
ঐ দলটি এ হত্যার দায়ভার চাপিয়ে দেয় মু'আবিয়া (রাঃ)-এর উপর। যেহেতু দু'জনের মাঝে রাজনৈতিক সমস্যা ছিল বিদ্যমান। তাই বাহ্যিকভাবে সাধারণ মানুষরা ধোঁকায় পড়ে গেল ।
আলী (রাঃ)-এর হত্যার পর খেলাফতের দায়িত্ব নিলেন তাঁর বড় ছেলে হাসান (রাঃ) তিনি মাত্র ছয় মাস খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি মুসলমানদের দু'টি দলের মাঝের ফেত্নাকে নিভানোর জন্য নিজে ও ছোট ভাই হুসাইন (রাঃ) কে সঙ্গে করে মু'আবিয়া (রাঃ)-এর নিকট গেয়ে তাঁর হাতে বায়েত গ্রহণ করেন। আর এটা ছিল রসুলুল্লাহ (রাঃ)-এর ভবিষ্যত বাণীর বাস্তবায়ন; কারণ নবী (সাঃ) বলেন: নিশ্চয়ই আমার এ সন্তান সাইয়েদ (সর্দার)। আল্লাহ তা'য়ালা তার দ্বারা মুসলমানদের বিরাট দু'টি দলের মাঝে আপোস করে দিবেন।
এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক ভাবেই চলতে থাকে। দীর্ঘ বিশ বছর ধরে মু'আবিয়া (রাঃ)- দক্ষতার সহিত রাষ্ট্র পরিচালনা করেন ।
মু'আবিয়া (রাঃ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ) কে সম্মান করতেন। প্রতি বছর তাঁরা মু'আবিয়া (রাঃ)-এর নিকট যেতেন এবং তিনি তাঁদেরকে এক লক্ষ করে দিরহাম দিতেন। (বুখারী ও মুসলিম) একবার চার লক্ষ দিরহাম পুরস্কার দেন। হাসান (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর হুসাইন (রাঃ) মু'আবিয়া (রাঃ)-এর নিকট যেতেন এবং তিনি তাঁকে আহলে বাইতের যথাযথ সম্মান ও মহব্বত করতেন।
হিজরি ৫০ সালে মাদীনাতু কাইসার' শহরে (অর্থাৎ রোম সম্রাটের শহর ইস্তাম্বুলে) বিজয়ের জন্য সৈন্যদল পাঠানোর সময় মু'আবিয়া (রাঃ) হুসাইন (রাঃ)কে ডেকে পাঠালে তিনি তাতে শরিক হন। আর সে সেনাদলের সেনাপতি ছিলেন মু'আবিয়া (রাঃ)-এর ছেলে এজিদ (রহ:)। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এ যুদ্ধ সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়ে বলেন: আমার উম্মতের যে প্রথম সৈন্যদলটি কাইসার শহরে (ইস্তাম্বুলে) যুদ্ধ করবে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত ।' ১. কাইসার সেকালের রোম সম্রাটের উপাধি ২. বুখারী হাঃ নং ২৭০৭
নিঃসন্দেহে এ হাদীসটি এজিদ ইবনে মু'আবিয়া [রহঃ] সম্পর্কে যারা মিথ্যা অপপ্রচার করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত দলিল ।
- বই: আশুরা ও কারবালা
- লেখক : আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল
- প্রকাশনী : জায়েদ লাইব্রেরী
- বিষয় : ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ইসলামি ইতিহাস ও ঐতিহ্য
আশুরা ও কারবালা pdf download করতে নিচে ডাউনলোড বাটন ক্লিক করুন।