আঁধার রাতে আলোর খোঁজে pdf download, শাইখ আব্দুল মালিক আল কাসিম বই pdf download, adar rate alor khoje pdf download |
একটু পড়ুন:
রাত্রি জাগরণের সাধনা
হাসান (রহমাতুল্লাহ) বলেন, 'রাত্রি জাগরণের সাধনা ও অর্থ-সম্পদ সদাকা করার চেয়ে কঠিন কোনো আমলের কথা আমার জানা নেই।'
তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, 'তাহাজ্জুদগুজার লোকের চেহারা এত সুন্দর হয় কেন?' তিনি উত্তরে বলেন, 'তারা পরম করুণাময়ের সাথে একান্তে সময় কাটায়। তাই তিনি তাঁর নুরের একটি অংশ তাদের পরিয়ে দেন।
২৩. তাবাকাতুশ শাফিয়িয়্যাহ : ৪/২৩৫।
২৪. আল-ইহইয়া : ১/২২০ ।
কিয়ামুল লাইল বা রাত জেগে ইবাদত করা প্রথম প্রথম কষ্টকর হলেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে একসময় তা ভালোবাসা ও শখে পরিণত হয়। সাবিত বুনানি (রহমাতুল্লাহ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাতে ইবাদত করতেন এবং দিনে রোজা রাখতেন। তিনি বলতেন, 'কিয়ামুল লাইলের মাধ্যমে আমি আমার অন্তরে যে স্বাদ পাই, সে স্বাদ আর কোনো কিছুতেই পাই না।'
আমাদের মতো রাত জেগে ইবাদতকারী লোকেরাও ঘুম, বিশ্রাম ও আরামকে পছন্দ করে। তবে পার্থক্য হলো, তারা অলসতার ধুলো ঝেড়ে ফেলে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইবাদতে আত্মনিয়োগ করে। এমনই একজন হলেন আব্দুল আজিজ বিন রাওয়াদ রহমাতুল্লাহ। রাতের অন্ধকার যখন পৃথিবীকে ঢেকে নিত, তখন তিনি বিছানার ওপর হাত বুলিয়ে বলতেন, 'নিঃসন্দেহে তুমি আরামদায়ক; কিন্তু আল্লাহর কসম, জান্নাত তোমার চেয়ে অনেক গুণ বেশি আরামদায়ক।' এই বলে তিনি সারা রাত নামাজ পড়তেন।
রাত জেগে ইবাদতগুজার লোকেরা আমাদের মতো রাতে ঠিকই ঘুমায়; তবে তা রাতের শেষ প্রহরে ইবাদত করার বিশুদ্ধ নিয়তে। মুআবিয়া বিন কুররা রহমাতুল্লাহ-এর পিতা তার সন্তানদেরকে কিয়ামুল লাইল আদায় করার উপদেশ দিতেন। তারা যখন ইশার সালাত সম্পন্ন করত, তখন তিনি তাদের বলতেন, 'হে আমার ছেলেরা, ঘুমিয়ে পড়ো। হতে পারে এই রাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে (রাতের শেষাংশে ইবাদত করার মাধ্যমে) কল্যাণ অর্জনের তাওফিক দান করবেন।'
মুসলিমদের দিন-রাত এমন না হওয়া চাই—যেমনটি কবি বলেছেন :
হে প্রবঞ্চিত, তোমার দিন কাটে গাফিলতি ও উদাসীনতায়। রাত কাটে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। তোমার ধ্বংস তো অনিবার্য। তুমি এমন বিষয়ের পেছনে ঘাম ঝরাচ্ছ, অচিরেই যার পরিণাম তোমার মোটেই ভালো লাগবে না। পৃথিবীর বুকে তোমার এই জীবন তো চতুষ্পদ প্রাণীদের জীবনের মতো।'
সুতরাং হে ভাই, আখিরাতের সন্তান হও। দুনিয়ার সন্তান
হোয়ো না। কারণ সন্তান তার মায়েরই অনুগামী হয়। ২৬
সুলাইমান তাইমি এমন স্তরে উপনীত হয়েছিলেন যে, তিনি ইশার সালাতের অঞ্জু দিয়ে ফজরের সালাত আদায় করতেন। আর হাসান রহমাতুল্লাহ -এর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলতেন, “তিনি তন্দ্রাভাব অনুভব করলে অজু করতেন
২৬. আল-ফাওয়ায়িদ : ৬৮ পৃ.।
২৫. আল-ইহইয়া : ১/৪২০ ।
কিয়ামুল লাইলের প্রস্তুতি
নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ অনেক দীর্ঘ ও কঠিন এক জিহাদ। এ জিহাদে ধৈর্যের চূড়ান্ত সীমায় উপনীত হতে হয়। সাফওয়ান বিন সুলাইম -এর অবস্থা দেখো, তিনি গরমের মৌসুমে ঘরে সালাত আদায় করতেন আর শীতের মৌসুমে সালাত আদায় করতেন ছাদের ওপর। যেন তার চোখে ঘুম চলে না আসে। ২৮
সালাফগণ কিয়ামুল লাইলের জন্য নিজেদের খুব সুন্দর করে সাজাতেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহ -এর একটি সুতার টুপি ছিল, যা তিনি নিজের হাতে বানিয়েছিলেন। রাতে যখন নামাজের জন্য দাঁড়াতেন, তখন এই টুপি মাথায় দিতেন।
২৭.হিলইয়াতুল আওলিয়া: ৩/২৯।
২৮.হিলইয়াতুল আওলিয়া: ৩/১৫৯।
২৯.আস-সিয়ার ১১ /২০৬।
রাতের আঁধারে ইবাদতে দাঁড়াও এবং কুরআন তিলাওয়াত করো। সারা রাত ঘুমিয়ে থেকো না। ঘুমাও, তবে তা দ্বিধাগ্রস্ত ব্যক্তির মতো। কারণ, অনেক সময় মৃত্যু হঠাৎ এসে পাকড়াও করে। ফলে বিছানা থেকে তুলে তোমাকে কাফনেই শুইয়ে দেওয়া হয়। কত উত্তম সেই আঁখিযুগল, যেগুলো অশ্রু ঝরায় রহমানের ভয়ে।'
নফসের বিরুদ্ধে সাধনা প্রথম প্রথম খুবই কষ্টকর; কিন্তু দৃঢ় মনোবল নিয়ে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে পরবর্তী সময়ে তা খুব সহজ হয়ে যায়। সাবিত বুনানি বলেন, 'বিশ বছর পর্যন্ত আমি কষ্ট করে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েছি এবং পরবর্তী বিশ বছর তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আমি আরাম বোধ করেছি।
উম্মে সুলাইমান এ তার সন্তানকে বলতেন, 'হে বৎস, রাতে বেশি ঘুমিয়ো না। কারণ রাতের অধিক ঘুম মানুষকে কিয়ামতের দিন গরিব করে ছাড়বে। হে বৎস, যে আল্লাহকে চায়, সে রাতে ঘুমায় না। কারণ যে রাতে ঘুমায়, সে দিনে লজ্জিত হয়।
৩০. আস-সিয়ার : ৫/২২৪, সিফাতুস সাফওয়াহ : ৩/২৬০।
৩১. আজ-জাহরুল ফায়িহ : ১১১ পৃ.।
'হে ঘুমকাতুরে, হে গাফিল, ঘুমের আধিক্য আফসোসই বয়ে আনে।
উম্মে রবি বিন খুসাইম রহমাতুল্লাহ তার ছেলেকে উৎকণ্ঠিত দেখে বলেন, 'হে বৎস, তোমার অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে, তুমি কাউকে খুন করতে যাচ্ছ।' তখন রবি বিন খুসাইম রহমাতুল্লাহ এ বলল, 'আপনি ঠিকই ধরেছেন, আমি নিজের নফসকে খুন করতে যাচ্ছি।
উম্মে গাজওয়ান রহমাতুল্লাহ তার ছেলেকে বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার বিছানার হক নেই কি!? নিজের শরীরের হকও নেই কি??' তিনি বললেন, 'হে মা আমার, আমি তো এর মাধ্যমে নিজের শান্তিই খুঁজছি। আমলনামা গুটিয়ে ফেলার আগেই তা নেকি দিয়ে সমৃদ্ধ করতে চাচ্ছি।
৩২. আজ-জাহরুল ফায়িহ : ১৯ পৃ.।
৩৩. আল-মুদহিশ ৪৪৩ পৃ.।
৩৪. মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল : ২৭ পৃ.।
শাদ্দাদ বিন আওস রহমাতুল্লাহ এ বিছানার ওপর শুয়ে কয়েকবার এদিক সেদিক পার্শ্ব পরিবর্তন করতেন; কিন্তু তাঁর চোখে ঘুম আসত না । তখন তিনি বলতেন, 'হে আল্লাহ, জাহান্নাম আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।' এই বলে তিনি উঠে পড়তেন এবং সকাল পর্যন্ত নামাজ পড়তেন।
মহা কল্যাণ ও পূর্ণ প্রতিদান লাভ করার মানসে মানসুর বিন মুতামির রহমাতুল্লাহ টানা চল্লিশ বছর দিনে রোজা রেখেছেন এবং রাতে ইবাদত করেছেন। তিনি খুব কান্নাকাটি করতেন। তা দেখে তার মা তাকে বলতেন, 'হে বৎস, তুমি কি কাউকে খুন করেছ? তিনি বললেন, 'আমার সাথে আমি কী করেছি, তা আমিই ভালো জানি।' তারপর যখন সকাল হতো, তখন তিনি চোখে সুরমা লাগিয়ে, মাথায় তেল মেখে এবং ঠোঁটদুটিকে উজ্জ্বল করে মানুষের কাছে বের হতেন।
উমর বিন জার রহমাতুল্লাহ বলেন, 'যখন রাত উপস্থিত হয় এবং গাফিলরা তাদের আরামের বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমের স্বাদ আস্বাদন করতে শুরু করে, তখন আবিদরা আনন্দচিত্তে
৩৫. সিফাতুস সাফওয়াহ : ৩/৩৮০।
৩৬. এমনটি করার কারণ হলো, যেন মানুষজন বুঝতে না পারে যে, তিনি রাতে এত কঠোর মুজাহাদা করেছেন। রিয়ার আশঙ্কায় এমনটি করতেন তিনি।
৩৭. আস-সিয়ার : ৫/৪০৬, সিফাতুস সাফওয়াহ ৩/১৬২।
আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ হয়। দীর্ঘ সময় ধরে তাহাজ্জুদ পড়ে রাতকে জীবন্ত রাখে। কপালের অগ্রভাগ জমিনে ঠেকিয়ে সিজদাবনত হয়ে রাত কাটিয়ে দেয়। যখন রাতের আঁধার কেটে সকালের আলো উদ্ভাসিত হয়। তখনও তারা তিলাওয়াতের স্বাদ অনুভব করতে থাকে। দীর্ঘক্ষণ ধরে ইবাদত করার কারণে তাদের শরীরও বিরক্ত ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে না। দুই দলই সকালে উপনীত হয়। তবে একদল রাতটিতে উপকার লাভ করে, আরেক দল তাদের ক্ষতির পাল্লা ভারী করে। যখন সকালে উপনীত হয়, তখন একদলের কাছে ঘুম ও আরামে বিরক্তি এসে যায়, আরেক দল ইবাদতের জন্য আরেকটি রাত আসার অপেক্ষায় থাকে। একই রাত একই সকাল, তবুও কী পার্থক্য দুই দলের মাঝে!
রবি বিন খুসাইম রহমাতুল্লাহ-এর মেয়ে তাকে প্রশ্ন করলেন, 'আব্বু, সব মানুষ ঘুমায়; কিন্তু আপনাকে ঘুমাতে দেখি না কেন? তিনি বললেন, 'হে আমার কন্যা, তোমার পিতা গুনাহকে খুব বেশি ভয় পায় (তাই ঘুমায় না)।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বাস্তব যে, আজ পুরো চিত্রটাই পাল্টে গেছে। সে যুগের সাথে এ যুগের মিল নেই বললেই চলে। রাতে ঘুমায় না এমন মানুষ এ যুগেও আছে, তবে তাদের অধিকাংশ নিষিদ্ধ ও হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে ঘুমহীন
৩৮. ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রচিত আজ-জুহদ : ৪৬৯ পৃ.
রাত কাটায়। অনেকে সম্পদের ক্ষতি, ব্যবসা-বাণিজ্যে লোকসান ইত্যাদি দুনিয়াবি ক্ষতির চিন্তায় ঘুমহীন থাকে। কিন্তু সালাফদেরকে ঘুম থেকে বিরত রাখত অন্য চিন্তা, অন্য ব্যস্ততা। তাদেরই একজন হলেন বিশর হাফি রহমাতুল্লাহ । তিনি সব সময় চিন্তাগ্রস্ত থাকতেন। একদিন তার চিন্তার কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন, 'মৃত্যু আমাকে খুঁজে ফিরছে।' তিনি রাতে ঘুমাতেন না। তিনি বলতেন, 'আমি ভয় পাই যে, এমন অবস্থায় আমার মৃত্যু এসে যাবে, যখন আমি ঘুমে বিভোর থাকব।
আমির বিন কাইস রহমাতুল্লাহ এর মেয়ে তাকে বলল, 'আব্বু, সব মানুষ তো ঘুমায়; কিন্তু আপনি ঘুমান না যে?' উত্তরে তিনি বললেন, 'হে আমার কন্যা, জাহান্নাম তোমার পিতাকে ঘুমাতে দেয় না। হে আমার চোখ, রাতের আঁধারে অশ্রু ঝরিয়ে আমাকে একটু সুখী করো। হতে পারে কঠিন কিয়ামত দিবসে তুমি এর কারণে সফল হবে।
FAQ
বই: আঁধার রাতে আলোর খোঁজে
লেখক: আবদুল মালিক আল কাসিম
প্রকাশনী: রুহামা পাবলিকেশন
বিষয়: ইবাদত ও আমল
আঁধার রাতে আলোর খোঁজে pdf download করতে নিচে ডাউনলোড বাটন ক্লিক করুন।