দ্যা রিভার্টস pdf download ফিরে আসার গল্প, the reverts fire asar golpo pdf download |
বই: দ্যা রিভার্টস : ফিরে আসার গল্প
রূপান্তর : সামছুর রহমান ওমর
কানিজ শারমিন সিঁথি
একটু পড়ুন:
আফগান যুদ্ধ কাভার করতে এসে তালেবানদের হাতে ধরা পড়লেন এক নারী সাংবাদিক। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের গাজায় এসে আটকে গেলেন এক ব্রিটিশ তরুণী। তারপর কী হলো তাদের?
একজন খ্রিষ্টান পাদ্রী, একজন ধার্মিক বৌদ্ধ, অনুশাসন মানা একজন হিন্দু যুবক আর মামার আমন্ত্রণে ফিলিস্তিনে ঘুরতে আসা পোল্যান্ডের এক ইহুদী তরুণ। চার ধর্মের চারজন। কেমন করে পাল্টে গেলেন সবাই?
বাবরি মসজিদ নিজ হাতে ভেঙেছেন বলবির সিং। এক সময়ে যা নিয়ে অনেক গর্ববোধ করতেন। কিন্তু তার মনে কীসের এত ব্যথা আজ? বাবরি মসজিদ ভেঙে দেয়া হাত আজ কেন মসজিদ গড়ার কাজে ব্যস্ত?
লন্ডনের বুকে বেড়ে ওঠা তিন যুবক। টাকা-পয়সা, অর্থ-বিত্ত, খ্যাতির কোনো অভাব নেই। তবুও শান্তি নেই মনে। শান্তির আশায় কত কী করে গেলেন। পেয়েছিলেন কি?
আধুনিক আমেরিকার দুজন মানুষ। একজন অবিশ্বাসী নাস্তিক। অন্যজন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর। দুজনের জীবনে নাটকীয় পরিবর্তন এল। কিন্তু কী করে?
MTV চ্যানেলের বিশ্বখ্যাত এক উপস্থাপিকা। পুরো ইউরোপের ঘরে ঘরে পরিচিত মুখ। একদিন দেখা হলো পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার ইমরান খানের সাথে। তারপর?
জানতে হলে পড়ুন 'দ্যা রিভার্টস: ফিরে আসার গল্প'। চিন্তা, দর্শন ও জীবন পরিবর্তনের মোট ১৩ টি গল্প নিয়ে সাজানো এই বই।
এক
২০০১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর।
দিনটার কথা মনে হলেই এক ভয়ংকর দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। দু-দুটো প্লেন এক এক করে ঢুকে গেল বিশাল টুইন টাওয়ারের পেটের ভেতর। ভোজবাজির মতো ধ্বসে পড়ল আকাশছোঁয়া দুটি টাওয়ার। জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে গেল অনেক মানুষ। এই ঘটনাই যে আমার জীবনটা এমন করে পাল্টে দিবে, তা কে জানত! ! !
ও হ্যাঁ, আমার পরিচয়টা আগে দিয়ে নিই। আমার নাম ইভন রিডলি। পেশায় সাংবাদিক। আমি তখন কাজ করতাম লন্ডনের 'সানডে এক্সপ্রেস' পত্রিকায়। আমাকে একজন ফোনে বলল, 'জলদি তোমার টিভি ছাড়ো, টুইন টাওয়ারে
হামলা হয়েছে। সব চ্যানেল ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে। টিভিতে যা দেখলাম, তা
নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। প্রথমটায় ভাবলাম, এটা বোধহয়
কোনো দুর্ঘটনা। কিন্তু না, আমাকে অবাক করে দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে দ্বিতীয়
আরেকটি প্লেন সোজা ঢুকে গেল টাওয়ারে। নিমিষেই ধ্বসে পড়ল টুইন টাওয়ার,
আমেরিকার অহংকার।
কিছু সময় পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল- এটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয় । এটি ছিল পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা। আমি উপলব্ধি করলাম, পেশাগত কারণে খবর সংগ্রহের জন্য আমার খুব দ্রুতই নিউইয়র্ক যাওয়া উচিত।
কিন্তু আমেরিকাগামী সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আমেরিকার সীমান্ত। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে আমেরিকাতে ঢোকা এখন খুব কঠিন।
লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্টে তখন আমেরিকান মানুষদের ভিড়। নিজ দেশে স্বজনদের কাছে ফেরার জন্য সবাই ব্যাকুল। দ্রুত আমেরিকায় ফিরতে সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে তাদেরকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকেট দেয়া হচ্ছিল। অনেক চেষ্টায় চারদিন পর আমি নিউইয়র্কগামী প্লেনের টিকেট পেলাম।
বোর্ডিং পাসের জন্য অপেক্ষা করছি। এমন সময় আমার সম্পাদকের ফোন এল- 'রিডলি ! '
আমি তাকে সারপ্রাইজ দেয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠলাম, 'জানো, আমি টিকেট পেয়ে গেছি। অল্পক্ষণের মধ্যেই প্লেনে উঠতে যাচ্ছি।'
ওপারে কিছু সময়ের নিরবতা।
তারপর উত্তর এল, 'রিডলি ! আমাদের পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তুমি সোজা পাকিস্তান চলে যাও। তারপর আফগানিস্তান।'
'কী!' আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। 'আফগানিস্তান?'
'হুম! ঘটনার শুরু আফগানিস্তান থেকে। সারা পৃথিবীর চোখ এখন সেদিকেই থাকবে। তোমার যাত্রা শুভ হোক।' লাইনটা কেটে গেল ।
আমার বাক্স বোঝাই শীতের কাপড়। আমি দাঁড়িয়ে আছি নিউইয়র্কগামী প্লেনের লাইনে। আমাকে কিনা এখন যেতে হবে মরুর দেশ আফগানিস্তানে। অবিশ্বাস্য ! কী আর করা। আমেরিকার টিকেট বাতিল করে দুবাইয়ের টিকেট কাটলাম। দুবাই হয়ে পৌঁছালাম পাকিস্তানে।
আফগানিস্তানের ভিসা পাওয়ার জন্য আমি তিন-তিনবার চেষ্টা চালালাম। ভিসা পেলাম না। অথচ সংবাদ সংগ্রহের জন্য আফগানিস্তানে না গেলেই নয়। এখন উপায়?
বিবিসি'র সাংবাদিক জন থমসন এক অভিনব বুদ্ধি বের করল।
দুই
জন থমসন একদিন আমার কাছে এসে বলল, 'দেখ! আমি পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে গেছি'। জনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরোটাই কালো বোরকায় ঢাকা। সামনে বিরাট এক মূর্তি, অথচ তাঁর শরীরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
বন্দি থেকে মুসলিম হওয়ার গল্প
তাৎক্ষণিক আমার মাথায় দারুণ বুদ্ধি খেলে গেল। আমি ভাবলাম, 'আরে এরকম বোরকা পরে তো আমিও অদৃশ্য হয়ে যেতে পারি। তারপর ঢুকে যেতে পারি আফগানিস্তানে। জন থমসন অদৃশ্য হয়ে যেতে পারলে, আমি কেন নয়?
আমার দুই গাইডের একজন পাকিস্তানি, আরেকজন জন্মসূত্রে আফগান। তাদের সাথে বসে দারুণ এক বুদ্ধি আঁটলাম। ঠিক হলো, আমরা বিয়ে বাড়ির লোক সাজব। আমি থাকব বোরকায় ঢাকা। তারপর কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছি এমন ভাব করে ঢুকে পড়ব আফগানিস্তানে।
যেই ভাবা সেই কাজ।
একদিন আমরা পাকিস্তান সীমান্ত ঘেঁষে আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমাদের গাড়ি তখন চলছিল 'খায়বার পাস' দিয়ে। খায়বার পাস পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গিরি উপত্যকা। দুপাশে পাহাড় আর সবুজ ভূমিঘেরা চমৎকার সব দৃশ্য। আমার ধারণাই ছিল না, খায়বার পাস এত বড়! আমি মনে করেছিলাম, এটার দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৩০ গজ হবে। আসলে এর দৈর্ঘ্য ৩৪ মাইল। ইস! কী বোকাই না ছিলাম আমি!
আমার মনে তখন চিন্তার ঝড়। আফগানিস্তান! না জানি সেখানকার মানুষগুলো কেমন? বুশ-ব্লেয়ারের ভাষায় সেখানে শয়তানের শাসন চলছে। মহিলারা চরম নির্যাতিত এবং নিষ্পেষিত জীবনযাপন করছে। অধিকার বলতে তাদের কিছুই নেই । তালেবান শাসকেরা এতই খারাপ যে, ছোট বাচ্চাদেরও ঘুড়ি উড়াতে দেয় না।
কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে যুদ্ধ। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ, সবচেয়ে গরিব দেশের উপর হামলা চালাবে। না জানি সেখানকার মানুষগুলো কী ভাবছে?
হঠাৎ ঝাঁকুনিতে আমার চিন্তার রেশ কেটে গেল। তাকিয়ে দেখি আমাদের গাড়ি থেমে গেছে । আমরা দাঁড়িয়ে আছি 'নো ম্যানস ল্যান্ডে'। একটু দূরেই আফগানিস্তান সীমান্ত ।
আমরা দুরু দুরু বুকে এগিয়ে গেলাম চেকপোস্টের দিকে। ভয়াল দর্শন সব প্রহরী দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। মাথায় পাগড়ি, ইয়া লম্বা আলখাল্লা, মুখে লম্বা দাড়ি । ভয়ংকর তাদের চাহনি। তাদের হাতের কালাশনিকভ রাইফেল সূর্যের আলোয় চকচক করছে। আমার বুকের ভেতর তখন দুম দুম ড্রাম বাজছে। এতটাই জোরে যে, আমি নিজের কানে শুনতে পাচ্ছিলাম হৃদপিণ্ডের আওয়াজ।
একবার মনে হলো উল্টো দিকে ফিরে দৌড় দিই। কিন্তু তখন আর পেছন ফিরে যাবার উপায় ছিল না।
অবাক কাণ্ড! ওরা আমার দিকে ভালো করে তাকালই না। একবারের জন্যেও না।
হয়তো বিরাট বোরকার আড়ালে কোনো মহিলা ভেবেই। গাইডরা আমাকে ভিন্ন এক আফগানি মহিলা বলে পরিচয় দিল। ভুয়া একটি আইডি কার্ডও দেখাল।
একটু পরে গাড়িতে চড়ে বসলাম। আমার তখন দারুণ রোমাঞ্চ অনুভব হচ্ছিল,
‘শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানে চলে এলাম। পুরুষ শাসিত আফগানিস্তান... যা নিয়ে
পাশ্চাত্যে দুর্নামের শেষ নেই।'
আমরা এসে পৌঁছলাম 'জালালাবাদ'। এটা আফগানিস্তানের অন্যতম বড় এক শহর । একটা বড় মার্কেটের সামনে এসে গাড়ি থামালাম। দেখি, পুরুষেরা কাঁধে করে বাজারের বড় বড় ব্যাগ নিয়ে বেরুচ্ছে। ভাবলাম, 'বাহ, দারুণ তো! এখানে পুরুষেরা বাজার-সদাই করে। পাশ্চাত্যে তো শপিং মল থেকে বাজার-সদাই সব সময় আমাদের নারীদেরই করতে হয়।'
পরে জানলাম এখানকার নিয়মকানুন খুব কড়া । মহিলারা মাহরম পুরুষ ছাড়া অপরিচিত
লোকদের সাথে কথা বলতে পারে না। নিয়ম নেই। আমি অনেক মহিলাকেও দেখতে
পেলাম বোরকায় ঢাকা। তারা তাদের পুরুষ সঙ্গীদের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি অবাক হলাম। সবার চেহারা কেমন হাসিখুশি, সুখী সুখী ভাব। দুদিন পরে আমেরিকা উড়ে এসে এদের ঘাড়ে বোমা ফেলবে, সেটা নিয়ে এদের কোনো চিন্তাই নেই ।
আমরা এলাম ছোট একটা গ্রামে। তখন কী এক উপলক্ষ্যে সেখানে বেশ আনন্দ
ফুর্তি চলছিল। গ্রামের লোকজন গাইডের কাছে আমার পরিচয় জানতে চাইল।
গাইড পশতু ভাষায় বিড়বিড় করে কী বলে গেল, আমি তার এক বিন্দু বিসর্গও বুঝতে পারলাম না। তবে এতটুকু বুঝলাম, গাইডের উত্তর শুনে তারা মোটেও খুশি হয়নি। তারা ভাবছিল, চারদিকে এখন যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব, এর মধ্যে গাইড এক পশ্চিমা নারীকে নিয়ে এল এখানে। ব্যাটার আক্কেল জ্ঞানটা কী শুনি! তার উপরে মোল্লা উমরের কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিল 'কোনো লোক পশ্চিমা বিদেশিকে
সাহায্য করলে তার জন্য কড়া শাস্তি পেতে হবে। স্বভাবতই তারা গাইডের উপর খুব
ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল । ভেতরে ভেতরে ভয়ও পাচ্ছিল, না জানি কখন ধরা পড়ে যায় !
আফগানরা জাতিগতভাবে ফুর্তিবাজ ও হাসিখুশি। খুব বেশিক্ষণ মনমরা হয়ে থাকা এদের ধাতে নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের ভয় কমে এল। দু-একজন মহিলা দোভাষীর মাধ্যমে আমার সাথে কথাও বলা শুরু করল।
বিশ বছর বয়সী এক মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম, 'এই যে দুদিন পরে যুদ্ধ শুরু হচ্ছে, তোমার ভয় করছে না?'
বিরক্তিমাখা স্বরে সে উত্তর দিল 'আর বলবেন না। আমার খুব রাগ লাগছে।
আমি জানতে চাইলাম 'কেন?'
সে বলা শুরু করল, 'আমি ছিলাম নার্সিং ইনিস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক নার্স। বছর দুয়েক আগে তালেবানরা হঠাৎ করেই সে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিল। আমি চলে এলাম গ্রামে। ভেবে দেখুন, আজ যদি আমি ঠিকভাবে আমার প্রশিক্ষণ শেষ করতে পারতাম, তাহলে এই যুদ্ধের সময় আমি কত কাজ করতে পারতাম! আহতদের সেবা করা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা.... তা না, আমি এখন হাত পা গুটিয়ে এই অজপাড়া গাঁয়ে এসে পঁচে মরছি।'
কথার মাঝখানে এক বয়স্ক মহিলা আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তার চেহারায় তাচ্ছিল্য, দুহাত কোমরে রাখা। আমাকে ভালোমতো নিরীক্ষণ করে জানতে চাইলেন, 'এই মেয়ে! তোমার ছেলে-মেয়ে আছে?'
আমি উত্তর দিলাম, 'আছে, একটা মেয়ে'।
'মোটে একটা?'
'জ্বি, মোটে একটা'
তিনি আমার বুকের উপর সজোরে একটা ধাক্কা মারলেন, 'তোমরা পশ্চিমা নারীরা আসলেই হতভাগা। তোমাদের বাচ্চা হয় মোটে একটা দুইটা। আমাকে দেখ । আমার সন্তান মোট পনেরো জন। যুদ্ধের মাঠে যখন তোমাদের সব সৈন্য মারা যাবে, আমি তখনো একে একে সন্তান জন্ম দিতে থাকব।'
এটা ভাবার কোনো কারণ নেই, আফগান মহিলারা লাজুক লাজুক আর জড়সড়
মাটির মূর্তি। আমি মনে মনে ভাবছিলাম, 'বাপরে! এই যদি হয় মহিলার তেজ,
তবে পুরুষেরা না জানি কেমন?'
আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, 'এই যে আমেরিকা এসে আপনাদের উপর বোমা ফেলবে, আপনাদের ভয় করছে না?'
তিনি সমান তেজে উত্তর দিলেন, 'আসুক না আমেরিকান সৈন্য! এই গ্রামে যদি আসে, আর আমি যদি হাতের কাছে পাই, তবে জামা কাপড় ছিঁড়ে নিজ হাতে আমি ওদের শায়েস্তা করব।
দ্যা রিভার্টস pdf download - ফিরে আসার গল্প ডাউনলোড করতে নিচে ডাউনলোড বাটন ক্লিক করুন।