কবরের আযাব pdf ডাউনলোড

কবরের আযাব pdf download, ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম বই pdf download, koborer azab pdf download
কবরের আযাব pdf download, ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম বই pdf, koborer azab pdf download


মানুষের জীবন পরিক্রমা

মানব জীবনকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা- ১. রূহের জগৎ, ২. মাতৃগর্ভের জগৎ, ৩. পার্থিব জগৎ, ৪. বারযখ বা কবরের জগৎ, ৫. আখিরাত বা পরজগৎ। এই পাঁচটি জগৎ সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলোচনা নিম্নে পেশ করা হলো ।-

১. রূহের জগৎ :

মহান আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করে তার পৃষ্ঠদেশ থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানবের আত্মা সৃষ্টি করেন। এরপর তাদের নিকট থেকে তিনি তাওহীদের স্বীকৃতি গ্রহণ করেন। মহান আল্লাহ বলেন, (আরবি)

আর স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে

তাদের বংশধরকে বের করলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের উপর

সাক্ষী করলেন যে, আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা

সাক্ষ্য দিলাম। যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পার যে,

আমরা এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম' (আ'রাফ ৭/১৭২)।

নিশ্চয়ই

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করে তার পিঠে হাত বুলালেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল রূহকে বের করলেন। এরপর তাদের নিকট থেকে এই অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, তারা কেবল আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করবে না। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ১. ইবনু কাছীর ৩/৫০৩ 


আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করে তার পিঠ মাসাহ করলেন। এতে তার পিঠ থেকে তার সমস্ত সন্তান বের হল, যাদের তিনি ক্বিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্টি করবেন। তিনি তাদের প্রত্যেকের দুই চোখের মাঝখানে নূরের ঔজ্জ্বল্য সৃষ্টি করলেন। অতঃপর আদম (আঃ) -এর সামনে পেশ করলেন। আদম (আঃ) বললেন, হে প্রভু! এরা কারা? আল্লাহ বললেন, এরা তোমার সন্তান'। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

কিয়ামতের দিন জাহান্নামী এক লোককে বলা হবে যে, দুনিয়ার সবকিছু যদি তোমার হয় তাহলে কি তুমি তা (জাহান্নাম থেকে) মুক্তিপণ হিসাবে দিবে? রাসূল (ছাঃ) বলেন, সে বলবে, হ্যাঁ। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তার চেয়েও সহজ বিষয় তোমার নিকটে চেয়েছিলাম। আমি আদমের পিঠ থেকে তোমাকে বের করে এই ওয়াদা নিয়েছিলাম যে, তুমি আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। অতঃপর তুমি তা প্রত্যাখ্যান করে আমার সাথে শরীক করেই ছাড়লো।

রূহের জগতে মানুষ কিভাবে কথা বলেছে এবং আল্লাহর কথা কিভাবে শ্রবণ করেছে, তা আল্লাহ তা'আলাই ভাল জানেন। এ বিষয়ে কেবল ঈমান পোষণ করতে হবে। সেখানকার কথা বলা ও শ্রবণ করার অবস্থা দুনিয়ার কোন মানুষ অবগত নয়।

২. মাতৃগর্ভের জগৎ ।

পিতার সামান্য শুক্রবিন্দু মাতৃ জঠরে প্রবেশ করে। তার ৪০ দিন পর জমাট রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। এর ৪০ দিন পর তা গোশতপিণ্ডে রূপান্তরিত হয়। তার ৪০ দিন পরে তাতে আল্লাহর হুকুমে রূহ ফুঁকে দেওয়া হয়। ক্রমান্বয়ে

২. তিরমিযী হা/৩০৭২: মিশকাত হা/১১৮; ছহীহুল জামে' হা/৫২০৮, সনদ ছহীহ। ৩. ছহীহুল জামে' হা/৮১২৩ : সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭২। এই মানব ভ্রূণে রক্ত, গোশত, অস্থিমজ্জা তৈরী হয়, পরিণত হয় একটি পূর্ণাঙ্গ মানব শিশুতে। এরপরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মাতৃগর্ভে থাকার পর তা ভূমিষ্ট হয়। মানুষ সৃষ্টির এই ক্রমধারা কুরআন ও হাদীছে সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (আরবি)


নিশ্চয়ই আমরা তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি, তারপর শুক্র হতে, তারপর রক্তপিণ্ড হতে, তারপর পূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট অথবা অপূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট গোশত হতে। তোমাদের নিকট বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করার নিমিত্তে। আর আমরা যা ইচ্ছা করি তা একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত মাতৃগর্ভে অবস্থিত রাখি। অতঃপর আমরা তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি, পরে যাতে তোমরা যৌবনে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু দেয়া হয় এ বয়সেই, আবার কাউকে কাউকে ফিরিয়ে নেয়া হয় হীনতম বয়সে, যাতে সে জ্ঞান লাভের পরও কিছু না জানে' (হজ্জ ২২/৫)। অন্যত্র তিনি বলেন, কি তাকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, তারপর তোমাকে অবয়ব দিয়েছেন পুরুষের ? (কাহফ ১৮/৩৭)। তিনি আরো বলেন, (আরবি)

আর আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে, তারপর শুক্রাণু হতে, তারপর তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। নারী তার গর্ভে যা ধারণ করে এবং যা প্রসব করে তা আল্লাহর জ্ঞাতসারেই হয়। আর কোন বয়স্ক ব্যক্তির বয়স বাড়ানো হয় না কিংবা কমানো হয় না কিন্তু তা তো রয়েছে কিতাবে; নিশ্চয়ই তা আল্লাহর জন্য সহজ' (ফাতির ৩৫/১১)।


আল্লাহ আরো বলেন. (আরবি) তিনিই তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। তারপর শুক্রবিন্দু হতে, তারপর জমাট রক্ত হতে। অতঃপর তিনি তোমাদের শিশুরূপে বের করে আনেন। তারপর যেন তোমরা তোমাদের যৌবনে পদার্পণ কর, অতঃপর যেন তোমরা বৃদ্ধ হয়ে যাও। আর তোমাদের কেউ কেউ এর পূর্বেই মৃত্যুবরণ করে। আর যাতে তোমরা নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যাও। আর যাতে তোমরা অনুধাবন কর' (গাফির/মুমিন ৪০/৬৭)।

অন্যত্র তিনি আরো বলেন, 'আমরা মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর আমরা তাকে শুক্র বিন্দুরূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমরা শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে গোশতপিণ্ডে পরিণত করেছি। এরপর সেই গোশতপিণ্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি। অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে এক নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুনতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়। এরপর তোমরা মৃত্যু বরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে' (মুমিনূন ২৩/১২-১৬)।

মানব সৃষ্টির ধারাক্রম সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যিনি সত্যবাদী এবং সত্যবাদী হিসাবে স্বীকৃত, আমাদের নিকটে বর্ণনা করেছেন, “তোমাদের প্রত্যেককেই চল্লিশ দিন পর্যন্ত মায়ের পেটে জমা রাখা হয় বীর্য হিসাবে। অতঃপর দ্বিতীয় চল্লিশ দিন পর্যন্ত জমাট রক্তপিণ্ডে আর পরবর্তী চল্লিশ দিনে গোশতপিণ্ডে রূপান্তরিত করা হয়। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা চারটি বিষয় অর্থাৎ তার রিযিক, মৃত্যু, পুণ্যবান কিংবা হতভাগ্য হবে এর হুকুম দিয়ে একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। 


আল্লাহ্র কসম! তোমাদের কেউ জাহান্নামের উপযোগী কাজ করতে থাকে, এমনকি তার এবং জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত কিংবা এক গজের ব্যবধান রয়ে যায়, এমতাবস্থায় ভাগ্যলিপি তার উপর বিজয়ী হয়। আর সে জান্নাতের উপযোগী কাজ ও আমল করতে থাকে, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর কোন ব্যক্তি জান্নাতের উপযোগী কাজ করতে থাকে। এমনকি সে ব্যক্তি এবং জান্নাতের মধ্যে এক হাত কিংবা আরও কম দূরত্ব থেকে যায়, এমন সময় ভাগ্যলিপি তার উপর বিজয়ী হয়। আর সে জাহান্নামের উপযোগী কাজ করতে আরম্ভ করে। পরিণামে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে'।


অপর একটি হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘জরায়ু বা মাতৃগর্ভে আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে নিযুক্ত রেখেছেন। অতঃপর ফেরেশতা বলেন, হে রব! এতো শুক্র! হে পরওয়ারদেগার এতো এখন জমাট বাঁধা রক্ত! এ রক্তপিণ্ড যখন গোশতপিণ্ডে পরিণত হয় তখন সে বল, হে পরওয়ারদেগার! এযে এক টুকরো গোশতপিণ্ড। অতঃপর আল্লাহ যখন তার সৃষ্টি সম্পূর্ণ করার ইচ্ছা করবেন তখন সে বলবে, হে আমার রব! একি পুরুষ হবে, না নারী, নেককার হবে, না বদকার, এর রিযিক কি পরিমাণ হবে এবং তার বয়সই বা কি হবে? অতঃপর এ সম্পর্কে আল্লাহ যে ফায়ছালাই প্রদান করবেন, তাই তার মায়ের পেটে থাকতেই লিখে দেয়া হবে।" একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাতৃগর্ভে থেকে শিশু ভূমিষ্ট হয়। আর এর মাধ্যমে তার মাতৃগর্ভের জগতের পরিসমাপ্তি ঘটে।


মাতৃগর্ভ থেকে মানুষের ভূমিষ্ট হওয়া সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, (আরবি) আর আমরা মানুষকে তার মাতা পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোয় সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয়' (আহক্বাফ ৪৬/১৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ৪. বুখারী হা/৩০৮৫, ৬১০৫, ৬৯০০। ৫. বুখারী হা/৩০৮৬, ৬১০৬।


আর আমরা মানুষকে তার মাতাপিতার ব্যাপারে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু'বছরে। সুতরাং আমার ও তোমার পিতামাতার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই' (লোকমান ৩১/১৪)। মানবশিশু ভূমিষ্ট হওযার সময় সে সব বিষয় সম্পর্কে থাকে অজ্ঞ, জ্ঞানহীন, পরনির্ভরশীল। আল্লাহ বলেন, (আরবি) আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃউদর থেকে এমন অবস্থায় বের করেছেন যে, তোমরা কিছুই জানতে না' (নাহল ১৬/৭৮)।

কবরের আযাব pdf download করতে নিচে ডাউনলোড বাটন ক্লিক করুন।

Post a Comment

স্প্যাম কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন! ধন্যবাদ, পিডিএফ বই ডাউনলোড সমস্যা হচ্ছে? এখানে দেখুন>যেভাবে PDF ডাউনলোড করবেন?

Previous Next

نموذج الاتصال