আর রাহীকুল মাখতুম বাংলা pdf download, আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ.) বই pdf download, ar rahiqul makhtum bangla pdf download |
একটু পড়ুন:
আরবের ভৌগোলিক অবস্থান এবং জাতিসমূহ
প্রকৃতপক্ষে সিরাতে রাসুল বা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত বলতে তাঁর বাস্তব প্রতিচ্ছবিকে বুঝায়— যা তিনি মানবজাতির সামনে পেশ করেছেন। মানুষকে অন্ধকার থেকে বের করে দিয়েছেন আলোর সন্ধান। মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন আল্লাহর বন্দেগিতে। এমনকি ইতিহাসের চিত্রকেই পাল্টিয়ে দিয়েছেন এবং মানবজগতের জীবনধারায় আমূল পরিবর্তন সাধন করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবন ধারার পূর্ণাঙ্গ প্রতিচ্ছবি আঁকা ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব নয় যতক্ষণ না আল্লাহর বাণী অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বের ও পরের অবস্থার তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ না করা হবে। তাই মূল বিষয়ের আলোচনা শুরুর আগে ইসলামপূর্ব আরবের বিভিন্ন জাতি-সম্প্রদায় এবং তাদের জীবনযাপনের অবস্থা বর্ণনা করা জরুরি। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবকালের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সম্ভব হবে।
আরবের অবস্থান আভিধানিকভাবে 'আরব' শব্দটি বালুকাময় প্রান্তর, অনুর্বর জমি বা শষ্যবিহীন অঞ্চল অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রাচীনকাল থেকে এ শব্দটি ব্যবহার হয়ে আসছে জাযিরাতুল আরব এবং তার অধিবাসীদের ক্ষেত্রে।
এবার আমরা আরবের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে কিঞ্চিত ধারণা নিতে পারি। আরবের পশ্চিমে রয়েছে লোহিত সাগর ও সিনাই উপদ্বীপ, পূর্বে আরব উপসাগর ও দক্ষিণ ইরাকের এক বড়ো অংশ এবং দক্ষিণে আরব সাগর—যা ভারত মহাসাগরের বিস্তৃত অংশ, উত্তরে সিরিয়া এবং উত্তর ইরাকের একাংশ। উল্লেখিত সীমান্তসমূহের কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা মতবিরোধ রয়েছে। গোটা ভূভাগের আয়তন দশ থেকে তেরো লাখ বর্গমাইল।
অভ্যন্তরীণ, ভৌগোলিক এবং ভূপ্রাকৃতিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই আরব উপদ্বীপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ উপদ্বীপের চারদিক মরুভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত। এ কারণেই এ অঞ্চলটি এমন সংরক্ষিত বলে বোদ্ধামহল মনে করেন। অন্যরা এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব সহজে বিস্তার করতে পারে না। তাই দেখা গেছে— জাযিরাতুল আরবের মূল ভূখণ্ডের অধিবাসীরা প্রাচীনকাল থেকেই নিজেদের সকল কাজে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ অবস্থানের দিকে দিয়ে এ উপদ্বীপটি এমন দু’পরাশক্তির প্রতিবেশী যে, ভূপ্রকৃতিগত প্রতিবন্ধকতা না থাকলে এ পরাশক্তিদ্বয়ের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা কখনই সম্ভবপর হতো না আরবদের পক্ষে।
বহির্বিশ্বের দিক থেকে আরব উপদ্বীপের অবস্থানের প্রতি লক্ষ করলেও দেখা যাবে— দেশটি তৎকালীন মহাদেশগুলোর একেবারে মধ্যস্থল বা কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। স্থলপথ এবং জলপথ উভয় দিক থেকেই বাইরের বিশ্বের সাথে আরবের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো সহজ। যেমন—জাযিরাতুল আরবের উত্তর পশ্চিম অংশ হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশের প্রবেশদ্বার। উত্তর- পূর্ব অংশে ইউরোপিয়ান জাতি। পূর্বদিকে ইরান, মধ্য এশিয়া এবং দূর প্রাচ্যের প্রবেশ পথ। এ পথে যাওয়া যায় চীন এবং ভারত পর্যন্ত। এভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও মহাদেশ থেকে সাগর ও মহাসাগর হয়ে আসা জলপথ আরব উপদ্বীপের সঙ্গে সৃষ্টি করেছে চমৎকার যোগসূত্র। বিভিন্ন দেশের জাহাজগুলো সরাসরি আরবের বন্দরে গিয়ে ভিড়ে। এমন ভৌগোলিক অবস্থান ও সীমারেখার প্রেক্ষিতে আরব উপদ্বীপের উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্ত ছিলো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যবসা- বাণিজ্য, কৃষি ও শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় প্রাণকেন্দ্র।
কাহলান : এর প্রসিদ্ধ শাখা-প্রশাখাগুলো হচ্ছে হামদান, আলহান, আশয়ার, তাই, মা হিজ (মাযহিজ থেকে আনস ও আননাখ, লাখম (লাখম হতে কিন্দাহ, কিন্দাহ হতে বনু মুআবিয়া, সাকুন ও সাকাসিক), জুযাম, আমিল্লাহ খাওলান, মাআফির, আনমার (আনমার থেকে খাসয়াম ও বাখিলাহ, বাখিলাহ থেকে আহমাস) আযদ (আযদ থেকে আউস, খাজরায, খুযাআহ এবং জাফরান বংশধরগণ। পরবর্তী সময়ে এরা সিরিয়া রাজ্যের আশেপাশে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং আলে গাসসান নামে প্রসিদ্ধ লাভ করেন।
সাধারণ কাহতানি গোত্রসমূহ পরবর্তীকালে ইয়েমেন ছেড়ে দেয় এবং আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় বসতি স্থাপন করে। এরা সেই সময় দেশত্যাগ করেছিলো, যখন রোমকরা মিসর ও সিরিয়া অধিকার করার পর ইয়েমেনবাসীদের জলপথের বাণিজ্যের ওপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলো এবং স্থলপথের বাণিজ্যও অধিকারে এনেছিলো। এর ফলে কাহতানিদের বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। যার সাক্ষ্য এসেছে পবিত্র কুরআনে। আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেন (আরবি)
'সাবার অধিবাসীদের জন্য তাদের বাসভূমিতে একটা নিদর্শন ছিলো—দুটি বাগান; একটি ডানে, একটা বামে। (তাদেরকে বলেছিলাম) তোমাদের প্রতিপালকপ্রদত্ত রিযিক ভোগ করো আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। সুখ-শান্তির শহর আর ক্ষমাশীল পালনকর্তা। কিন্তু তারা (আল্লাহ হতে) মুখ ফিরিয়ে নিল। কাজেই আমি তাদের বিরুদ্ধে পাঠালাম বাঁধ-ভাঙ্গা বন্যা, আর আমি তাদের বাগান দুটিকে পরিবর্তিত করে দিলাম এমন দুটি বাগানে—যাতে জন্মাতো বিস্বাদ ফল, ঝাউগাছ আর কিছু কুলগাছ। অকৃতজ্ঞতাভরে তাদের সত্য প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি তাদেরকে এ শাস্তি দিয়েছিলাম।
আমি অকৃতজ্ঞদের ছাড়া এমন শাস্তি কাউকে দেই না। তাদের এবং যে সব জনপদের প্রতি আমি অনুগ্রহ বর্ষণ করেছিলাম সেগুলোর মাঝে অনেক দৃশ্যমান জনপদ স্থাপন করে দিয়েছিলাম এবং ওগুলোর মাঝে সমান সমান দূরত্বে সফর মনযিল করে দিয়েছিলাম। (আর তাদেরকে বলেছিলাম) তোমরা এসব জনপদে রাতে আর দিনে নিরাপদে ভ্রমণ করো। কিন্তু তারা বললো – হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের সফর-মনজিলগুলোর মাঝে ব্যবধান বাড়িয়ে দাও। তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিলো। কাজেই আমি তাদেরকে কাহিনি বানিয়ে ছাড়লাম (যে কাহিনি শোনানো হয়) আর তাদেরকে ছিন্নভিন্ন করে দিলাম। এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য রয়েছে নিদর্শন।
হিমইয়ারি ও কাহলানি গোত্রদ্বয়ের বংশদ্বয়ের মধ্যে বিরাজমান আত্মকলহ ও দ্বন্ধ ছিলো তাদের অন্যতম প্রধান কারণ। যার ইঙ্গিত বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া যায়। এ সকল সূত্র থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায়— আত্মকলহের কারণে জীবনযাত্রার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানাবিধ জটিল সমস্যার উদ্ভব হওয়ায় কাহলানি গোত্রগুলো স্বদেশভূমির মায়া-মমতা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু স্বস্থানে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে হিমইয়ারি গোত্রগুলো। যে সকল কাহলানি গোত্র স্বদেশের মায়া-মমতা কাটিয়ে অন্যত্র গমন করে তাদের চারটি শাখায় বিভক্ত হওয়ার কথা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়—
(আরবি) (আযদ) । তারা নিজেদের নেতা ইমরান ইবনে আমর মুখাইকিয়ার পরামর্শে দেশত্যাগ করেন। প্রথমে এরা ইয়েমেনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয় এবং অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য বিভিন্ন দল পাঠাতে থাকে। এরপর এরা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বসতি স্থাপন করে। এদের বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ—
সালাবাহ ইবনে আমর: তিনি প্রথমত হিজায অভিমুখে অগ্রসর হয়ে সালাবিয়া ও যূকার নামক স্থানের মধ্যস্থানে বাসস্থান নির্মাণ করে বসবাস করতে থাকেন। যখন তাঁর সন্তান-সন্ততি বয়োঃপ্রাপ্ত হন এবং বংশধরগণ শক্তিশালী হয়ে উঠেন তখন মদিনা অভিমুখে অগ্রসর হয়ে মদিনাকেই বসবাসের জন্য উপযুক্ত স্থান মনে করে সেখানে বসতি স্থাপন করেন। এই সা'লাবাহর বংশ থেকেই আওস এবং খাযরাজের জন্ম। আওস এবং খাযরাজ ছিলো সালাবাহর পুত্র হারিসার সন্তান।
হারিসা ইবনে আমর: অর্থাৎ খুযাআহ এবং তাঁর সন্তানাদি। এই বংশধারার লোকেরা হেজাযের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরার পর মাররায যাহরানে অবস্থান নিয়ে পরে মদিনায় হামলা করে। মক্কা থেকে বনি জুরহুম গোত্রের লোকদের বের করে দিয়ে নিজেরা মক্কায় বসতি স্থাপন করে।
ইমরান ইবনে আমর: তিনি এবং তাঁর সন্তানাদি আম্মানে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাই তাঁদেরকে বলা হতো 'আযাদে আম্মান'।
নাসর ইবনে আমর : তার সঙ্গে সম্পর্কিত গোত্রগুলো তুহামায় বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁদেরকে বলা হতো 'আযাদে শানুআহ'।
বই: আর রাহিকুল মাখতুম (বাংলা) নতুন সংস্করণ
লেখক : আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ.)
প্রকাশনী : আয-যিহান পাবলিকেশন
বিষয় : সীরাতে রাসূল (সা.), নবীজির সীরাহ বিষয়ক সেরা বইগুলো
আর রাহীকুল মাখতুম বাংলা pdf download করতে নিচে ডাউনলোড বাটন ক্লিক করুন।