আমীরুল মুমিনীন 'উসমান ইবনু আফ্ফান pdf download, ড. যুবাইর মুহাম্মাদ এহসানুল হক বই pdf download |
একটু পড়ুন:
গাতফান যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতিনিধি
হিসেবে দায়িত্ব পালন:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৪০০ সাহাবী নিয়ে গাতফান গোত্রের উদ্দেশ্যে বের হন। তাঁর সাথে কয়েকটি ঘোড়া ছিল। এ সময় তিনি 'উসমান (রা.)-কে প্রতিনিধি হিসেবে মাদীনায় রেখে যান। ৮ যুল কুস্সা নামক এলাকায় মুসলিমরা গাতফানের এক লোককে আটক করলেন। লোকটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, 'আপনি তাদের কাউকে পাবেন না। আপনার অগ্রযাত্রার খবর পেয়ে তারা পাহাড়ের শীর্ষদেশ পাড়ি দিয়ে পালিয়েছে। আমি আপনার সাথে যাচ্ছি।' রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলেন। লোকটি ইসলাম গ্রহণ করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বিলাল (রা.)- এর সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে দিলেন। এগার দিন পর বাহিনী মাদীনায় ফিরে এল।
৫৭. সহীহ আল-বুখারী, কিতাবুল মানাকিব, বাবু মানাকিবি 'উসমান ইবনি 'আফ্ফান, ২:২৬৫।
৫৮. ইবনু সা'দ, ২: ৫৭।
৫৯. ইবনু সা'দ, ২: ৩৪-৩৫ ।
যাতুর রিকা' যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন
হিজরী চতুর্থ সনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খবর পেলেন যে, গাতফান ও আনমার-এর একটি দল মাদীনা আক্রমণে এগিয়ে আসছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারশ' যোদ্ধা নিয়ে মাদীনা হতে বের হলেন। এবারও তিনি প্রতিনিধি হিসেবে উসমান (রা.)-কে মাদীনায় রেখে গেলেন। মুসলিম বাহিনী গাতফানের এক বিরাট বাহিনীর মুখোমুখি হন। এ যুদ্ধের প্রাক্কালে দু'দলই একে অপরের ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে। ফলে কোন সম্মুখ যুদ্ধ হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ যুদ্ধে সালাতুল খাওফ বা ভয়কালীন সালাত আদায় করেন। তিনি পনের দিন মাসীনার বাইরে ছিলেন।
বাইআতুর রিদওয়ান
হিজরী ষষ্ঠ সনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ১৪০০ সাহাবী নিয়ে 'উমরাহর উদ্দেশ্যে বের হলেন। কাফিরদের বাধা দানের আশংকা দেখে তিনি হুদাইবিয়া নামক স্থানে অবতরণ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাফিরদের কাছে এই খবর পাঠানোর প্রয়োজন অনুভব করলেন যে, তিনি যুদ্ধ করতে আসেননি; বরং 'উমরাহ করতে এসেছেন। প্রথমে খুরাশ ইবনু উমাইয়া আল-খুজা'ঈকে দূত হিসেবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ছা'লাব নামী এক উষ্ট্রে চড়ে খুরাশ মাক্কার পথে রওয়ানা হন। কুরাইশরা খুরাশকে হত্যা করতে চাইলে হাবশীরা তাকে রক্ষা করল। বিফল মনোরথ হয়ে খুরাশ হুদাইবিয়ায় ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিস্তারিত অবহিত করলেন।
শাস্তির বার্তাসহ আরেকজন দূত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। প্রথমে 'উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে দূত হিসেবে মনোনীত করা হল। ওজর পেশ করে 'উমার (রা.) নিজের স্থলে 'উসমান (রা.)-কে পাঠানোর প্রস্তাব করলেন।৬১ স্বীয় প্রস্তাবের পক্ষে 'উমার যুক্তিও পেশ করলেন: 'আমার ওপর কুরাইশদের হামলার আশঙ্কা করছি, আমার সাথে তাদের শত্রুতার বিষয়ে আপনি অবগত আছেন। মাক্কায় আমার গোত্র বানূ 'আদী-এর এমন কেউ নেই যে আমাকে রক্ষা করবে। তবুও হে রাসূলুল্লাহ! আপনি চাইলে আমি যেতে প্রস্তুত।" রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু বললেন না। 'উমার (রা.) আবারো বললেন, 'তবে আমি আপনাকে এমন
৬০. সহীহ আল-বুখারী, কিতাবুল মাগাযী, বাবু গাযওয়াতি যাতির রিকা', ২: ৩৭০-৭১; ইবনুল আসীর, ২:৫৬-৭।
৬১. মুহাম্মদ উমর আল-ওয়াকিদী, আল-মাগাযী, ২:৬০০।
৬২. প্রাগুক্ত।
একজনের নাম বলতে পারি মাক্কায় যিনি আমার চেয়ে বেশি শক্তিশালী, সেখানে তার প্রতিপত্তিশালী আত্মীয়-স্বজনও আছে যারা তাঁকে রক্ষা করবে, তিনি হলেন 'উসমান ইবনু আফ্ফান।' এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'উসমান (রা.)-কে ডেকে বললেন,
('উসমান!) কুরাইশদের কাছে গিয়ে বলো, আমরা কারো সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি, আমরা এসেছি সম্মানের সাথে এই মহান ঘর (কা'বা ঘর) যিয়ারত করতে। আমাদের সাথে হাদী আছে, আমরা ('উমরাহ শেষে) এগুলো যবেহ করে ফিরে যাব।
'উসমান (রা.) মাক্কার পথে রওয়ানা করে বালদাহ নামক স্থানে এসে কুরাইশ-এর একদল লোককে দেখতে পেলেন। তারা বলল: '('উসমান!) তুমি কোথায় যাচ্ছ?' ‘উসমান বললেন, 'কুরাইশ নেতৃবৃন্দের কাছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বার্তা নিয়ে যাচ্ছি।' তারা 'উসমান (রা.)-কে সেখান থেকে ফিরিয়ে দিতে চাইল। তখন আবান ইবনু সা'ঈদ ইবনিল 'আস তাঁকে নিরাপত্তা দিয়ে নিজ বাহনে চড়িয়ে মাক্কায় নিয়ে গেলেন। 'উসমান (রা.) এক এক করে কুরাইশ নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। আবু সুফইয়ান ইবনু হারব, সাফওয়ান ইবনু উমাইয়াসহ অন্যদের কাছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শান্তিময় মিশনের বার্তা পৌঁছালেন। সকলের একই রা ঃ 'আমরা থাকতে মুহাম্মাদ কিছুতেই কখনই মাক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। ৬৩
মুশরিকরা “উসমান (রা.)-কে কা'বা ঘর যিয়ারত করতে দিতে সম্মত হল । কিন্তু *উসমান (রা.) এই প্রস্তাবে রাজি হলেন না। ৬৪ 'উসমান (রা.) মাক্কার দুর্বল মুসলিমদের কাছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বার্তা পৌঁছে দিলেন এবং তাদেরকে আসন্ন মুক্তির সুসংবাদ দিলেন। তিনি তাদের কাছ থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য এই মৌখিক বার্তা নিয়ে এলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমাদের সালাম পৌছাবেন। যিনি তাঁকে হুদাইবিয়ায় এনেছেন তিনি তাঁকে মাক্কায় পৌছাতে পারবেন।' এদিকে মুসলিমদের মাঝে এই গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে উসমান (রা.) নিহত হয়েছেন। এই খবর শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম), সাহাবীগণকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
৬৩. ইবনু হিশাম, ৩:৩৪৪ ।
৬৪. ইবনু কায়্যিম আল-জাওমিয়্যাহ, যাদুল মা'আদ, ৩:২৯০। ৬৫. প্রাগুক্ত ।
করার ব্যাপারে বাই'আত করার আহবান জানালেন। সাহাবীগণ আমৃত্যু লড়াই করার বাই'আত করলেন সর্বপ্রথম বাই'আত করলেন আবূ সিনান 'আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াহাব ৬৬ তারপর একে একে সকল সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া আল-আসাদী। ৬৭ সাল্লাম)-এর হাতে হাত রেখে বাই'আত করলেন। সালামা ইবনু আল-আকওয়া' তিনবার বাই'আত গ্রহণ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের ডান হাত ধরে বললেন, এটি উসমান (রা.)-এর হাত। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে আঘাত করলেন। সেদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে ১৪০০ সাহাবী বাই'আত করেছিলেন। এটিকে বাইয়াতুর রিদওয়ান বলা হয়।
আমীরুল মুমিনীন ‘উসমান ইবনু আফ্ফান (রহ.)
লেখক : ড. যুবাইর মুহাম্মাদ এহসানুল হক
প্রকাশনী : বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার
বিষয় : সাহাবীদের জীবনী
আমীরুল মুমিনীন 'উসমান ইবনু আফ্ফান pdf download করতে নিচে ডাউনলোড বাটন ক্লিক করুন।