আল কুরআন এক মহাবিস্ময় pdf download, ড. মরিস বুকাইলি বই pdf download, al quraner ek mohabismoy-pdf |
একটু পড়ুন:
কুরআন বুঝতে বিশ্বকোষের জ্ঞান প্রয়োজন : অনেক শতাব্দী ধরে মানুষ এসব বুঝতে পারেনি, কারণ তার কাছে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক উপাত্ত ছিল না। কেবলমাত্র আজকের দিনে কুরআনের অসংখ্য আয়াত (যাতে প্রাকৃতিক জগতের আলোচনা করা হয়েছে) পুরাপুরি বোধগম্য হয়েছে । আমি তো এতদূরও বলা উচিত মনে করি যে, বিংশ শতাব্দীতে জ্ঞানের অবিরাম বৃদ্ধির... কারণে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি হওয়ার ফলে সাধারণ বিজ্ঞানীদের জন্যও কুরআনের সবটা বুঝতে পারাটা সবসময় সহজ নয়। এজন্য এসব বিষয়ে গবেষণামূলক কোর্স করে তাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে।
তার অর্থ হল- কুরআনের এই ধরণের সকল আয়াত বুঝার জন্য আজ একজনের প্রয়োজন নির্ভেজাল বিশ্বকোষের জ্ঞান, আমি বুঝাতে চাচ্ছি, এমন কিছু যা অনেক রকম জ্ঞানকে ধারণ করে। আমি 'বিজ্ঞান' শব্দটা ব্যবহার করছি সেই জ্ঞানকে বুঝাতে যা ভালোমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে সেসব মতবাদ অন্তর্ভুক্ত নয় যা কিছুকালের জন্য, একটা বা একগুচ্ছ বিষয় বুঝতে সাহায্য করে। আর পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির কল্যাণে অর্জিত আর মনোহর ব্যাখ্যার দাপটে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। আমি মূলত: কুরআনের বক্তব্যের সাথে সেই জ্ঞানের তুলনা করতে ইচ্ছা করি যা আর পর্যালোচনার অধীন হবার সম্ভাবনা নেই । আমি যেখানে এমন বৈজ্ঞানিক তথ্য পেশ করি যা এখনো ১০০ ভাগ প্রতিষ্ঠিত নয়, সেখানে আমি অবশ্যই এটা একেবারে পরিষ্কার করে দেব।
কুরআনে এমন কিছু দুর্লভ বক্তব্যের উদাহরণও আছে, যা এখনও আধুনিক বিজ্ঞানের দ্বারা নিশ্চিত হয়নি। আমি এ গুলির উল্লেখ করে দেখিয়ে দেব যে, সমস্ত যুক্তি-প্রমাণ এগুলিকে খুবই সম্ভব বলে মনে করতে বিজ্ঞানীদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। এরকম একটি উদাহরণ হল কুরআনের সেই বক্তব্য যে, জীবনের উৎস পানি। আরেকটি বক্তব্য হল, মহাবিশ্বের কোথাও কোথাও আমাদের পৃথিবীর মত জগত আছে ।
এসব বৈজ্ঞানিক বিবেচনা থেকে আমাদের এ কথা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে, কুরআন বিশেষভাবেই একটি ধর্মগ্রন্থ হিসাবে রয়ে গেছে। এটা অবশ্যই আশা করা যায় না যে, এর নিজস্ব বৈশিষ্টে বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য থাকবে । যখনই মানুষকে সৃষ্টি-রহস্য আর তার দেখা অসংখ্য প্রাকৃতিক ব্যাপার নিয়ে ভাবতে আহ্বান করা হয়, তখন এসব উদাহরণ ব্যবহারের সুস্পষ্ট লক্ষ্য হল খোদায়ী সর্বশক্তির উপর জোর প্রদান। বাস্তবতা হল, এসব নিয়ে ভাবতে গিয়ে আমরা খুঁজে পাই বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত তথ্যের উল্লেখ। এটি অবশ্যই আল্লাহর আরেকটি দান। এই দানের মূল্য নিশ্চয় এমন এক যুগে উজ্জ্বল হয়ে প্রকাশ পাবে, যখন বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর বস্তুবাদী নাস্তিকতা আল্লাহতে বিশ্বাসের বিকল্প হিসেবে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে চায়।
আমার গবেষণার শুরু থেকে শেষ অবধি আমি সর্বক্ষণ চেষ্টা করেছি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকতে । আমার বিশ্বাস, আমি সেই ধরণের নিরপেক্ষতা নিয়ে কুরআনের মুখোমুখি হতে পেরেছি, যেভাবে একজন চিকিৎসক কোন রোগীর বিবরণ-ফাইল খুলে দেখেন। অন্য কথায়, সবগুলো লক্ষণ সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করে তিনি রোগ নির্ণয়ের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেন। আমাকে স্বীকার করতেই হবে, প্রথম পথনির্দেশ আমি ইসলামের প্রতি বিশ্বাস থেকে লাভ করিনি, বরং সত্যের সরল গবেষণার আগ্রহ থেকে পেয়েছি। এভাবেই আজকে আমি এটা দেখে থাকি। এটা ছিল মূলত: সেই বাস্তবতা যা আমার অধ্যয়নের শেষ পর্যায়ে আমাকে পথ দেখিয়েছিল একজন নবীর উপর অবতীর্ণ গ্রন্থ কুরআনের একটি বর্ণনা দেখতে।
আমরা কুরআনের সেসব বক্তব্য পরীক্ষা করব যা আজকের দিনে কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক সত্যের রেকর্ড বলে মনে হয়। আগেকার যুগের লোকেরা এগুলোর আপাত অর্থ অনুধাবন করতে পারতো । এটা কল্পনা করা কিভাবে সম্ভব যে, কুরআনে পরবর্তী কালে যদি কোন পরিবর্তন হত, তাহলে সমগ্র কুরআনব্যাপী ছড়িয়ে থাকা দুর্বোধ্য অনুচ্ছেদগুলো কিভাবে মানুষের হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা পেতে পারল?" মূল পাঠের সামান্যতম পরিবর্তনও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই অসামান্য সঙ্গতি ধ্বংস করে দিত যা কুরআনের বৈশিষ্ট্য। এটা (অর্থাৎ কুরআনে বিকৃতি ঘটানো) আধুনিক জ্ঞানের সাথে সেসব বর্ণনার সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠা করতে আমাদেরকে বাধা দিত। কুরআনব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এসব বর্ণনা নিরপেক্ষ গবেষকের কাছে বিশুদ্ধতার সুস্পষ্ট ছাপের মত দেখায় ।
কুরআন হল এক প্রচার যা মানুষকে জানানো হয়েছিল ঐশী বাণী বা ওহীর প্রক্রিয়ায়। এই অবতীর্ণ হবার ধারা মোটামুটি তেইশ বছর ধরে চলেছিল। এটা হিজরাতের আগে ও পরে সমান সময়কাল-ব্যাপী ঘটেছিল। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, তামাম গ্রন্থব্যাপী (কুরআন ব্যাপী) বৈজ্ঞানিক বিষয় ছড়িয়ে থাকাটা ভেবে দেখবার জন্য স্বাভাবিক ছিল। গবেষণার ক্ষেত্রে আমরা যেটি করেছি, সূরাগুলি একত্র করার পরে আমরা সেগুলিকে একের পর এক পুনরায় শ্রেণীবদ্ধ করেছি। সূরাগুলি কিভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা উচিত? বিশেষ শ্রেণী- বিন্যাসকরণের কোন নির্দেশনা আমি কুরআনে পাইনি। তাই আমি
সেগুলিকে আমার ব্যক্তিগত ধারায় উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমার কাছে মনে হয়েছে, প্রথমে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত তা হল সৃষ্টিপর্ব। এখন, যেসব আয়াতে এই বিষয়ের উল্লেখ আছে, তার সাথে মহাবিশ্বের গঠন সম্পর্কিত আজকের প্রচলিত ধারণার তুলনা করা সম্ভব। তারপর আমি আয়াতগুলিকে নিম্নলিখিত সাধারণ শিরোনামে বিভক্ত করেছিঃ জ্যেতির্বিদ্যা, পৃথিবী, উদ্ভিদ ও প্রাণিজগত, মানুষ এবং বিশেষকরে মানব প্রজনন; শেষেরটি হল এমন এক বিষয় যা কুরআনে খুব গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এসব সাধারণ শিরোনামের সাথে উপ-শিরোনাম যোগ করা সম্ভব। তাছাড়া, অধুনিক জ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআন ও বাইবেলের বর্ণনার মধ্যে তুলনা করাকে আমি সহায়ক মনে করেছি । এটি করা হয়েছে সৃষ্টিপর্ব, মহাপ্লাবন ও ইহুদীদের মিশর ত্যাগের মত বিষয়ের ক্ষেত্রে।
মহাবিশ্ব সৃষ্টি: আসুন প্রথমে কুরআনে বর্ণিত সৃষ্টিপর্বকে পরীক্ষা করা যাক। একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ ধারণা বেরিয়ে আসে, তা হল বাইবেলের বর্ণনার সাথে এর পার্থক্য । এই ধারণা সেই সিদ্ধান্তের বিপরীত যা পশ্চিমা লেখকরা প্রায়ই ভুল করে টেনে থাকেন। তারা এটি করেন গ্রন্থ দুটির মধ্যকার শুধুমাত্র সাদৃশ্য প্রকটিত করার জন্য। অন্যান্য বিষয়ের মত সৃষ্টিপর্বের কথা বলতে গেলে, পশ্চিমে একটা জোরালো প্রবণতা আছে এই দাবী করার যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) বাইবেলের দেহ-রেখা নকল করেছেন। বস্তুত: বাইবেলের বর্ণনা মতে ছয়দিনে বিশ্ব সৃষ্টি হয় আর বাড়তি এক দিন খোদার বিশ্রামের দিন তথা সাবাত। বিষয়টিকে সূরা আল আরাফের এই অয়াতের (৭:৫৪) সাথে তুলনা করা সম্ভব।
‘আপনার প্রভু আল্লাহ যিনি আসমান ও যমিন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন ।’ আমাদেরকে সোজা কথায় উল্লেখ করতেই হচ্ছে যে, আধুনিক ব্যাখ্যাকারীগণ 'আইয়াম' শব্দটির ব্যাখ্যার উপর জোর দিচ্ছেন। শব্দটির একটি অনুবাদ হল ‘দিবসসমূহ' যার অর্থ চব্বিশ ঘন্টা সময়কাল নয়, বরং দীর্ঘ সময়কাল বা বহু যুগ।
FAQ
বই: আল কুরআন এক মহাবিস্ময়
লেখক : ড. মরিস বুকাইলি
প্রকাশনী : বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার
বিষয় : কুরআন বিষয়ক আলোচনা
আল কুরআন এক মহাবিস্ময় pdf download করতে নিচে ডাউনলোড বাটন ক্লিক করুন।