আঁধার রাতের বন্ধু pdf download, Adhar Rater Bondhu pdf download |
একটু পড়ুন:
এক দানবীরের কথা
বারশ বছর আগের কথা। তখন সুলায়মান বিন আবদুল মালিক মুসলিম জাহানের খলীফা। বাগদাদ তাঁর রাজধানী। সে সময়ের এক কাহিনী নিয়েই আমি হাজির হয়েছি তোমাদের সামনে।
'রাকা' শহরে বাস করতেন এক লোক। নাম তার খোযায়মা বিন বিশ্বর। তার ছিলো অনেক ধন-দৌলত, কিন্তু ছিলো না কৃপণতা ও অহঙ্কার। ধন-সম্পদের ছোঁয়া লাগলে অনেক মানুষ কৃপণ হয়ে যায়, কেউ কেউ আবার নির্দয়ও হয়ে যায়। খোযায়মা বিন বিশ্ব এমন ছিলেন না। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন প্রাণভরে আর দান করতেন হাত খুলে। দানের আশায়, দয়ার আশায়- তার দুয়ারে ছুটে আসতো মানুষ দলে দলে। কেউ খালি হাতে ফিরে যেতো না । কখনো কারো আশা অপূর্ণ থাকতো না। কেউ বঞ্চিত হতো না তার দান ও ধন থেকে। তার ভালোবাসা ও অনুগ্রহ থেকে।
তার দান ছিলো সবার জন্যে এবং সব সময়ের জন্যে। তার দয়া ও অনুগ্রহ ছিলো দিবা-রাত্র এবং সর্বত্র। এভাবে মানুষকে ভালোবেসে, মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে এবং মানুষকে দান করে, ধন্য করে বেশ সুখে-শান্তিতেই কাটছিলো তার সময়।
দানে তো ধন কমে না, বরং বাড়ে। বরকত হয়। কিন্তু আল্লাহ্র ইচ্ছায় একদিন খোযায়মা'র ধন কমে গেলো। কমতে কমতে
একেবারে সে গরীব হয়ে গেলো। এমনকি ক্ষুধা-অনাহার তার নিত্য সঙ্গী হয়ে গেলো।
আমীর যখন ফকীর
এখন কী করা? সারা জীবন দু' হাতে যিনি দান করেছেন মানুষকে, তিনি কি পারেন কারো কাছে হাত বাড়াতে? তবু তার ভাই-বেরাদার যখন তাকে সাহায্য করতে চাইলো, তিনি 'না' বলতে পারলেন না। বরং স্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে হাত পেতে নিলেন তাদের দান। কিন্তু রক্তের টান কতোদিন আর?
এক সময় রক্তের আত্মীয়রাও পিছিয়ে গেলো। আত্মার আত্মীয়রাও দূরে সরে গেলো। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলো সবার দয়ার দুয়ার। খোযায়মা'র আলো ঝলমল সংসারে নেমে এলো তিমির অন্ধকার। আমীরের সংসার হয়ে গেলো একেবারে ছারখার।
জীবন-সঙ্গিনী আমি।
সুখে ছিলাম পাশে, দুঃখেও আছি সাথে।
তবু খোযায়মা হতাশ হলেন না। হতাশ কেনোই বা হবেন? মানুষের দুয়ার বন্ধ হয়ে গেছে বলে কি আল্লাহ্ দুয়ারও বন্ধ হয়ে যাবে? না, তা হতেই পারে না! আল্লাহ্র দুয়ার সব সময় খোলা থাকে, কখনো বন্ধ হয় না!
তাহলে খোযায়মা কেনো হতাশ হবেন?
আল্লাহ্র সাহায্য থেকে কেনো তিনি বঞ্চিত হবেন? কিন্তু খোষায়মা জীবন-সঙ্গিনীকে কষ্ট দিতে চাইলেন না। একদিন তাকে তিনি বুঝিয়ে বললেন-
'আমি চাই না- আমার সাথে থেকে থেকে তুমিও কষ্ট পাও। তারচে' তুমি বাপের বাড়ি চলে যাও। আজ থেকে আমি আল্লাহ ছাড়া আর কারো সাহায্য নেবো না। ঘরেই বসে থাকবো দরোজা বন্ধ করে । হয় আসবে আল্লাহ্র সাহায্য নয় আসবে মৃত্যু! স্ত্রী বললেন-
‘এ কেমন কথা? সুখের সাগর এক সাথে পাড়ি দিয়ে আজ দুঃখের সাগরে আপনাকে একলা ভাসিয়ে চলে যাবো আমি! তেমন মেয়েই ভেবেছেন আমায়? কখনো না! সুখে-দুঃখে ও জীবনে-মরণে আমরা এক সাথেই থাকবো। আমার ঘর আপনার সাথে। আমার কবরও হয় যেনো আপনার পাশে।' তাই হলো ।
ঘরকে কবর বানিয়ে তারা পড়ে থাকলেন। হায়! অমন ভালো মানুষের এমন কষ্ট!
কার না চোখে পানি আসে- বলো? সারা জীবন যিনি মানুষের উপকার করলেন, একটু খবরও নিলো না !
সেই উপকারী বন্ধুর দুর্দিনে আজ কেউ পাশে এসে দাঁড়ালো না!
তাই মানুষের প্রতি এবং মানুষের এই সমাজের প্রতি তার যদি অভিমান হয়, তাহলে কি অন্যায় হবে?
আলী তানতাভী শিশু-কিশোর সিরিজ
গল্পে আঁকা ইতিহাস-১
ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী
অনূদিত
আঁধার রাতের বন্ধু pdf download করতে নিচে ডাউনলোড বাটন ক্লিক করুন।