কুরবানীর তাৎপর্য pdf download, সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী বই pdf download |
এভাবে ইমাম মালিকের নামও উল্লেখ করা যেতে পারে। ৯৩ হিজরীতে মদীনা তাইয়েবায় তাঁর জন্ম হয়। সমস্ত জীবন তিনি এখানেই বসবাস করেন। এ শহরে তখন এমন অনেক খান্দান ছিল যাদের বয়োবৃদ্ধগণ খোলাফায়ে রাশেদার যামানা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সাহাবায়ে কিরামগণই তাদেরকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছিলেন। তাঁদের মুরব্বীগণ ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সা) শিক্ষাপ্রাপ্ত। সুতরাং এ কথা কি কেউ ধারণাও করতে পারেন যে, এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাঁরা রাসূলুল্লাহর (সা) যুগের কার্যাবলী বিস্মৃত হয়ে গিয়াছিলেন এবং ঈদুল আযহার কুরবানীর প্রচলন কে করলেন, তাদেরকে এ কথা জানাবার সেখানে একজনও ছিল না ?
প্রথম ও দ্বিতীয় হিজরীর ফকীহগণের ব্যাপারেও একই কথা বলা যেতে পারে। তাঁদের সবারই অবস্থান রাসূলুল্লাহর (সা) যানামার এতো নিকটবর্তী ছিল যে, সুন্নাত-বিদয়াতে অনুসন্ধান করা তাঁদের জন্যে মোটেই কষ্টসাধ্য ছিল না। কোন সুন্নাত বিরোধী জিনিসকে সুন্নাত হিসাবে গ্রহণ করার মতো মানসিকতায় বিভ্রান্ত হবার সুযোগ তাদের মোটেই ছিল না।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হলো সমগ্র উম্মতের ধারাবাহিক কার্যাবলী। যেদিন থেকে রাসূলুল্লাহ (সা) ঈদুল আযহা এবং কুরবানী শুরু করেছেন, কার্যতঃ সেদিন থেকেই মুসলমানদের মধ্যে তার প্রচলন হয়েছে এবং তারপর থেকে আজ পর্যন্ত সমগ্র দুনিয়ার মুসলমান প্রতি বছর একে কার্যকরী করে আসছে। আজ পর্যন্ত একটি বছরও এর ফাঁক যায়নি। প্রত্যেক খান্দান পূর্ববর্তী খান্দানের কাছ থেকে ইসলামের পদ্ধতি হিসাবে একে গ্রহণ করেছে, তারপর সেটি পরবর্তী খান্দানকে সোপর্দ করা হয়েছে।
আসলে এটি একটি বিশ্বজনীন কাজ এবং দুনিয়ার যেখানেই কোন মুসলমান আছে সেখানেই একইভাবে এ পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। রাসূলুল্লাহর (সা) যুগ থেকে নিয়ে আমাদের যুগ পর্যন্ত প্রতি বছর এ কাজটি ক্রমাগত সম্পন্ন হয়ে আসছে, এর মাঝে ঈদুল আযহা ও কুরবানী ছাড়া একটি বছরও অতিক্রান্ত হয়নি। আসলে কুরআন যে ধারাবাহিকতা ও লোক পরম্পরায় আমাদের নিকট পৌঁছেছে এটিও ঠিক তাই। একই উপায়ে আমরা একথা জানতে পারি যে, আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ (সা) আরব দেশে খোদার নবীরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কোন দুষ্কৃতিমনা ফিতনাবাজ ব্যক্তি বর্তমানে এই ধারাবাহিকতাকে যদি সন্দেহযুক্ত বলতে চায় তাহলে ইসলামের আর কোন্ বস্তুটিই বা সন্দেহমুক্ত থাকে ?
এ ব্যাপারে আসলে কোনক্রমেই এ কথা বলা যায় না যে, আমাদের ইতিহাসের এক যুগে কুরবানী এবং ঈদের প্রচলন ছিল না, তারপর কোন প্রাচীন পুঁথিতে এর লিখিত নির্দেশ আবিষ্কৃত হয় এবং কতিপয় মোরা মৌলবী একত্রিত হয়ে জনগণকে বলে: “দেখো উমুক জায়গায় এ নির্দেশ আমরা লিখিতভাবে পেয়েছি। সুতরাং মুসলমান ভাইসব, এসো আমরা সবাই মিলে ঈদুল আযহা পালন করি এবং জানোয়ার কুরবানী করি।” যদি এমন কোন ব্যাপার হতো, তাহলে অবশ্যই কোন না কোন প্রকারে ইতিহাসের পাতায় এর সন্ধান পাওয়া যেতো যে, এ ঘটনা কবে এবং কোথায় হয়েছিলো ? কারা এ জন্যে দায়ী ? তাছাড়া আর একটা কথাও আছে যে, মুসলমানদের মধ্যে কোন মৌলবী সাহেব কখনো এ মর্যাদা লাভ করেননি যে, কোন প্রাচীন পুঁথি থেকে কোন নির্দেশ বের করে দেখাবার পর সমগ্র দুনিয়ার মুসলমান নিঃশব্দে তার কথা মেনে নিয়ে সেই মতো কাজ করতে শুরু করেছে এবং এর পরে আর কেউ এ কথাটি লিখে রাখবারও প্রয়োজন বোধ করেনি যে, পূর্বে তাদের মধ্যে এ পদ্ধতিটি প্রচলিত ছিল না, উমুক মৌলবী সাহেবের কথায় হালে এটিকে কার্যকরী করা হয়েছে।
এ তিন ধরনের প্রমাণ পরস্পরের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যশীল। হাদীসের অসংখ্য প্রামাণ্য ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনা উম্মতের নির্ভরশীল ফকীহগণের গবেষণা ও অনুসন্ধান এবং সমগ্র উম্মতের যুগ পরম্পরায় ধারাবাহিক কার্যাবলী- সমস্ত থেকে একটি কথাই প্রমাণ হয়। অতঃপর এ পদ্ধতিটি যে রাসূলুল্লাহর (সা) নির্ধারিত এতে কি সন্দেহ থাকতে পারে ? এর বিপক্ষে কারুর কাছে যদি কোন তুচ্ছতম প্রমাণ থাকে যে, এ পদ্ধতিটি রাসূলুল্লাহর (সা) নির্ধারিত নয়, তাহলে অবশ্যই তাকে তা জনসমক্ষে পেশ করতে হবে এবং একথা আমাদেরকে বোঝাতেই হবে যে, কবে কোন্ মৌলবী সাহেব, কোথায় এটি উদ্ভাবন করেছিলেন ? এবং কেমন করে গোটা মুসলিম জাহান বিপুলভাবে প্রতারিত হয়ে একে রাসূলুল্লাহর (সা) সুন্নাত বলে মেনে নিয়েছিলো ?
কুরবানীর তাৎপর্য pdf download করতে নিচে ডাউনলোড বাটন ক্লিক করুন।