গল্পগুলো নামাজের pdf download, by মুনতাসির মামুন, golpogulo namager pdf |
* ট্রেন মিস
হন্তদন্ত হয়ে রেলস্টেশনে ছুটে এলো শফিক। ঘেমে একাকার।
হার্টবিট এমন লাফাচ্ছে যেন বুকের ভেতর ড্রাম বাজছে। করুণ চোখে সামনে তাকিয়ে দেখল ট্রেনের শেষ বগিটা ঝিক ঝিক করতে করতে দৃষ্টিসীমা থেকে হারিয়ে গেল। কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না সে। হা হয়ে তাকিয়ে আছে আর জোরে জোরে দম ফেলছে। কাঁধে হাত রেখে একজন অপরিচিত লোক বলল, ভাই, ট্রেন মিস করেছেন? কী আর করা! পরের ট্রেনে যেয়েন; আমারও পরের ট্রেনে
যাওয়ার কথা।
একটা জরুরি কাজ ছিল ভাই। কী আর করা, অপেক্ষা করে পরের ট্রেনেই যেতে হবে। ট্রেন যে এভাবে কাঁটায় কাঁটায় ছেড়ে দেবে তা কে জানত? আমার শিডিউলটাই মিস হয়ে গেল। তো আপনি এত আগে আগে এসেছেন কেন? নেক্সট ট্রেন তো এক ঘণ্টা পর।
*পাবলিক প্লেস ও মসজিদ
বিকালবেলা পার্কে কথা হচ্ছে রাসেল, ইমন আর সুমনের। রাসেল : নাভিদকে আজ দেখছি না। দুদিন দৌড়িয়েই ক্লান্ত হয়ে গেল নাকি?
সুমন : জানি না কী হয়েছে। গতকালও তো এসেছিল। আজ কলেজে যায় নাই ও। কলেজে গেলে তো আমার সাথে দেখা হতো। এরপর দুপুরে স্যারের ব্যাচেও অনুপস্থিত ছিল। বিকালে চায়ের দোকানেও আজকে নাভিদকে দেখিনি। ওই যে ইমন আসছে। দেখি ও কিছু জানে কি না। ও তো নাভিদের সবচাইতে ক্লোজ ফ্রেন্ড, বাসাও কাছাকাছি।
ইমন : কীরে, তোরা কী নিয়ে কথা বলছিলি? আমি শুরুটা মিস করে ফেললাম।
সুমন : রাসেল বলছিল নাভিদের কথা। সেদিন না ছেলেটা আমাদের সাথে দৌড়ানোর টিমে জয়েন করল। বেশ শক্ত-সমর্থই তো মনে হয়। কিন্তু আজ এলো না কেন? কদিনেই ক্লান্ত হয়ে গেছে নাকি? জানো কিছু?
* ছন্দময় শৃঙ্খলা
আব্বু জানো? আজকে না আমি যোগ আর বিয়োগ শিখেছি। বেশ মজাই লেগেছে।
তাই! খুবই খুশির কথা মামনি। আচ্ছা বলো তো ৪-এর সাথে ২ যোগ করলে আবার বিয়োগ করলে কত কত হয়?
পিচ্চি মেয়ে মালিহা কী সুন্দর আঙুল গুনে গুনে উত্তর দিলো ৬ আর ২। দেখে মাহমুদ সাহেবের মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল। এই সেদিন তাদের ঘর আলো করে এসেছিল এই ফুটফুটে রাজকন্যা, সে কিনা এখন কথা বলা শিখে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে! মাঝে মাঝে সে-ই শিক্ষক হয়ে বিভিন্ন জিনিস শেখাতে থাকে বিজ্ঞের মতো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এই অপূর্ব নিয়ামতের জন্য। এসব ভাবতে ভাবতে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আর কী কী শিখেছ আজকে আম্মু?
আজকে অঙ্ক, বাংলা আর ইংরেজি ক্লাস ছিল। তবে একটা মজার খেলা পছন্দ হয়েছে।
কীরকম খেলা?
শোনো আব্বু, সামনে আমাদের স্পোর্টস, ওই দিন সবার সামনে আমরা সুন্দর ডিসপ্লে করব ইনশাআল্লাহ। বান্ধবীরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাত, কোমর পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে কেমন যেন ঢেউয়ের মতো।
* প্রতিদিনের পথপ্রদর্শন
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন। শেষ পর্যন্ত ছাটাই করেই দিলো!
হ্যাঁ রে। তাই তো দেখছি, শফিক। আসলে কদিন ধরে কোম্পানির
মন্দা যাচ্ছে। তাই এমপ্লয়ি কমিয়ে ফেলছে। বলল তুহিন।
হ্যাঁ। একদিক দিয়ে অবশ্য ভালোই হয়েছে। এই কোম্পানির পলিসি আমার ভালো লাগছিল না। বুঝলি তুহিন, ভাবছিলাম আমিই ছেড়ে দেব চাকরি; তা আর করতে হলো না, ওরাই ছাটাই করে দিলো।
এইমাত্র ছাটাই হওয়া ১৫ জন এমপ্লয়ির মধ্যে ২ বন্ধু কথা বলছে
আর হাঁটছে। পাশ দিয়ে বিমর্ষ হয়ে হেঁটে যাচ্ছে তাদেরই একটু
সিনিয়র সালেহ ভাই।
শফিক ডাক দিয়ে বলল, সালেহ ভাই, আপনি কি খুব বেশি চিন্তিত? এত টেনশন নিয়েন না। মাথা ঠান্ডা করেন। এই তো আজান দিয়ে দিলো। চলেন নামাজ পড়ি গিয়ে। মাথা থেকে চিন্তা কিছুটা দূর হবে।
আরে মিয়া যাও তুমি নামাজে। আমি বাঁচি না আমার চিন্তায়, আসছে জ্ঞান দিতে। এক ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে এই বাজারে কীভাবে চলব বুঝতেছি না। চাকরিটা চলে গেল! মাথায় যেন বাজ পড়ল। কী করব বুঝতে পারছি না।
ভাই ঠান্ডা হোন। একটা ব্যবস্থা আল্লাহ নিশ্চয়ই করবেন। চলেন নামাজটা পড়ে আসি।
ধুর! তোমরা যাও তো, আমাকে একা থাকতে দাও। মাথাটা খুব ধরেছে। তোমরা যাচ্ছ যাও; আমাকে নিয়ে চিন্তা করা লাগবে না।
শফিক আর তুহিন পাশের মসজিদে গিয়ে পাশাপাশি ইশার
নামাজের জামাতে দাঁড়াল। ইমাম সাহেব ১ম রাকাআতে তিলাওয়াত করলেন সূরা আল বাকারার ১৫৩ থেকে ১৫৭ আয়াত এবং ২য় রাকাআত এ তিলাওয়াত করলেন সূরা আদ দুহা। নামাজ শেষে দুজনে মসজিদের পাশের হোটেলে রাতের খাবার খেতে বসল।
নামাজে খেয়াল করলাম তোর চোখ থেকে টপ টপ করে পানি
পড়ছিল। কীরে শফিক, চাকরি চলে যাওয়াতে মন খুব খারাপ?
না না! নামাজে যখন ইমাম সাহেব সূরা পড়ছিলেন তখন ভাবছিলাম কত জীবন্ত এই আল কুরআন! যেন এই মাত্র আমার জন্যই নাজিল হলো, আমার সাথেই কথা বলছেন আল্লাহ! কী প্রাসঙ্গিক সব আয়াত!
কেন রে? আমি তো শুনলাম ইন্না লিল্লাহ পড়লেন ইমাম সাহেব।
আচ্ছা ভালো কথা! চাকরির ডিসমিসাল লেটার হাতে পেয়ে তুই ইন্না
লিল্লাহ পড়লি কেন? আমরা তো কেউ মারা গেলে ইন্না লিল্লাহ পড়ি।
ইন্না লিল্লাহ মূলত যে-কোনো বিপদে পড়লে পড়তে হয়। একটু ব্যাখ্যা করি, বুঝবি। আজকে ইমাম সাহেব পড়লেন সূরা আল বাকারার ১৫৩ থেকে ১৫৭ আয়াত। অর্থগুলো একটু খেয়াল কর :
ইমানদারেরা শোনো! সবর ও নামাযের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন। আর আল্লাহর পথে যারা নিহত হয়, তাদের মৃত বোলো না। বরং তারা জীবিত। কিন্তু 'তাদের জীবিত থাকার বিষয়টা তোমরা অনুভব করো না। অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, কিছু অনাহার, কিছু জানমাল ও ফলফসলের ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে। আর সুসংবাদ শোনাও সবরকারীদের; যারা যখনই কোনো বিপদ আসে, বলে, আমরা তো আল্লাহরই এবং তার কাছেই ফিরে যাব। তাদেরই ওপরে তাদের রবের তরফ থেকে আছে বিপুল অনুগ্রহ আর দয়া। এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।
বি:দ্র: গল্পগুলো নামাজের pdf download করিতে চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না!!