কাশ্মির বীরাঙ্গনা pdf free download শাওকিন কাশ্মিরী kashmir birongona pdf free download |
নাম: কাশ্মির বীরাঙ্গনা পিডিএফলেখক: সাংবাদিক শাওকিন কাশ্মিরীপ্রকাশনী: আবাবীল প্রকাশনীফরম্যাট: পিডিএফ pdfপৃষ্ঠা সংখ্যা: 127ভাষা: bangla/বাংলা {alertSuccess}
শুরুর কথা/একটু পড়ুন
১৯৮৭ সালে ভারতের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম মুত্তাহাদা মাহায' প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। মুসলিম মুস্তাহাদা মাহায-এর লক্ষ্য ছিল, নির্বাচনে জয়লাভ করে আইনগতভাবে এ্যাসেম্বলির দখল হাতে নিয়ে ভারতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা। ফলে সর্বস্তরের নারী-পুরুষের সঙ্গে আমিও এই নির্বাচনি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ি। মুসলিম মুত্তাহাদা মাহাযকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে আমি কাশ্মিরি মহিলাদের সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করি। এই আন্দোলনে আমি মহিলাদের পাশাপাশি বেশ কজন প্রভাবশালী পুরুষকেও জড়িয়ে নিতে সক্ষম হই। আমি সর্বান্তকরণে নির্বাচনি কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি ।
আরও পিডিএফ: স্টুডেন্ট হ্যাকস pdf ডাউনলোড
'মুসলিম মুস্তাহাদা মাহায' এমন একটি শক্তশালী রাজনৈতিক জোট, কাশিরের প্রায় সবকটি বড় ইসলামি ও রাজনৈতিক দল যার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন কমিটির প্রধান মৌলভী মোহাম্মাদ ফারুক মুসলিম মুস্তাহাদা মাহাযকে সমর্থন দেওয়ার পরিবর্তে প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেসের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে। মৌলভী ফারুক ড. ফারুককে এই শর্তে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি নির্বাচনে মুসলিম মুত্তাহাদা মাহাযকে পরাজিত করে দেবেন।
মৌলভী ফারুক ও ড. ফারুকের যোগসাজশ কাশ্মিরি মুসলমানদের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয়। তারপরও কাশ্মিরি জনতা এই চ্যালেঞ্জ বরণ করে নেয়। প্রাদেশিক সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার যখন অনুভব করল, কাশ্মিরি জনতা মুসলিম মুত্তাহাদা মাহায-এর পক্ষে, তখন অতি নীরবে এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম মুক্তাহাদা মাহায-এর বিজয়কে পরাজয়ে পরিণত করে দেয়। ড. ফারুক মৌলভী ফারুককে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করে দেখান ।
সেই ঘটনাটি ছিল আমাদের জন্য চরম বেদনাদায়ক, যা আমাদের মনে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আমরা মনে-প্রাণে বিদ্রোহী হয়ে উঠি। নির্বাচনের সময় মুসলিম মুত্তাহাদা মাহায-এর বেশ কজন সক্রিয় যুবক কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং তাদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায় ।
'চুরি আবার সিনাজুরির এই পলিসি গ্রেফতারকৃত যুবকদের চরমভাবে বিক্ষুব্ধ করে তোলে । পুলিশ লকাপে তারা একসঙ্গে থাকার সুযোগ পায় । এতে তারা পরস্পর মতবিনিময় ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরিকল্পনা তৈরি করারও সুযোগ পায়। কিছুদিন পর জেল থেকে বেরিয়ে এসে তারা আরও কিছু যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ ও মতবিনিময় করে ভারতের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক সশস্ত্র আন্দোলন পরিচালনার পরিকল্পনা ঠিক করে। কিন্তু তারা তাদের সকল পরিকল্পনা গোপন রাখে ।
More pdf: মনের ওপর লাগাম pdf ডাউনলোড
পরিকল্পনা মোতাবেক যুবকদের একটি দল সীমান্তের ওপারে ( আযাদ কাশ্মির) চলে যায়। প্রথম প্রথম কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলেও তারা সাহসিকতার সাথে মিশন ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। অবশেষে তারা সফলতা লাভ করে। যুবকরা সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্র হাতে ফিরে আসতে শুরু করে। এক গ্রুপের পর আরেক গ্রুপ রওনা হয়ে যায়। যাওয়া-আসার এই ধারা অব্যাহত থাকে। তারা ধাপে- ধাপে তাদের গোপন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করে ।
মুসলিম মুত্তাহাদা মাহাযকে নির্বাচনে হারিয়ে দেওয়ার পর সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় ও নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযানে অন্যতম ভূমিকা রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ এক পুলিশ অফিসার আলী মোহাম্মাদ বাটালি । যুবনেতা এজাজ ডার-এর নেতৃত্বে চার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবক এই আলী মোহাম্মাদকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয়। যুবকরা আলী মোহাম্মাদের বাড়িতে আক্রমণ চালায়। কিন্তু আলী মোহাম্মদ অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে যায়। সংঘর্ষে এজাজ ডার শাহাদতবরণ করেন । অন্যরা পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে সক্ষম হয়। চার কাশ্মিরি যুবকের বন্দুক হাতে একজন পুলিশ অফিসারের বাসভবনে হামলার খবর আগুনের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সবার মুখে বিস্ময়, কাশ্মিরি যুবকদের হাতে কী
অস্ত্র আছে! কাশ্মিরি যুবকরা পুলিশ অফিসারের বাড়িতে ঢুকে হামলা করার সাহস রাখে!
বাস্তবিক সে-সময় একজন কাশ্মিরি যুবকের হাতে অস্ত্র থাকা এবং কারও বাড়িতে ঢুকে হামলা করা সাধারণ মানুষের চোখে অবিশ্বাস্য ও বিস্ময়করই ছিল। কারণ, তারা পূর্ব থেকে এর কিছুই জানত না। কিন্তু আমি এ খবরে মোটেও বিস্মিত হইনি। কেননা, আমি এ সম্পর্কে পূর্ব থেকেই অবহিত ছিলাম ।
যাহোক, ঘটনার পর সরকার তৎপর হয়ে ওঠে। পুলিশ বেছে বেছে সেই যুবকদের গ্রেফতার করতে শুরু করে, যারা বিগত নির্বাচনে মুসলিম মুক্তাহাদা মাহাযের পক্ষে কাজ করেছিল।
এই ধরপাকড়ের ধারাবাহিকতায় আলুচাবাগের হেলাল আহমাদ বেগ- এর বাড়িতে পুলিশ হানা দেয় এবং তাকে না পেয়ে তার পিতাকে বেদম প্রহার করে রেখে যায়। এলাকার মানুষ সশস্ত্র সংগ্রামে হেলাল বেগের সম্পৃক্ততার কথা শুনে বিস্মিত হয়ে পড়ে। একটি হালকা-পাতলা সাধাসিধা লাজুক ও অল্পবয়স্ক নিরীহ ছেলেও কি দেশের সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সংগঠিত সশস্ত্র দলের সদস্য হতে পারে? বিষয়টি অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাসে আনতে পারেনি। কিন্তু যেহেতু পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে হেলাল আত্মগোপন করেছিল, তাই তার প্রতি মানুষের সন্দেহ হওয়ারও কারণ ছিল । হেলাল বেগ-এর সশস্ত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের বিষয়টি ছিল আলুচাবাগের মানুষের জন্য গৌরবের বিষয়।
আমিও একসময় আলুচাবাগের বাসিন্দা ছিলাম। সেখানে আমার বাপের বাড়ি। তাই আমিও নিজেকে এই গৌরবে অংশীদার বানিয়ে নিলাম। হেলাল বেগ-এর সঙ্গে শৈশবে আমার অনেক দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে, আলাপ পরিচয় ছিল। কিন্তু বিয়ের পর এ পর্যন্ত আর তাকে দেখিনি । এখন তো লোকটা দেখতে কেমন, তাও আমার মনে নেই । এ ঘটনার পর আমার মনে তাকে এক নজর দেখার আগ্রহ সৃষ্টি হয় ।
মুসলিম মুত্তাহাদা মাহায-এর নির্বাচনে পরাজিত হওয়া ছিল আমাদের জন্য বিরাট এক দুর্ঘটনা। সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণকারী যুবকরা ছিল বাস্তবিকই মুজাহিদ। সেই মুজাহিদ গ্রুপে আমাদের হেলাল আহমাদ বেগ-এর অংশগ্রহণে আমাদের মর্যাদা বেড়ে গিয়েছিল । তাই তাকে দেখার ও তার সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি ও আমার পরিবারের সবাই উদগ্রীব হয়ে পড়ি । কিন্তু হেলার বেগ আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়ায় আর তার দেখা পাইনি ।
হেলাল আহমাদ বেগ কোথায় লুকিয়ে ছিল, আমারও তা জানা ছিল না । আমি শুধু এতটুকু জানতাম যে, একটি সংঘবদ্ধ যুবক দল উপত্যকা থেকে অন্য যুবকদের রিক্রুট করে সীমান্তের ওপারে প্রেরণ করেছে এবং তারা সামরিক প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র হাতে ফিরে আসছে এবং নিয়ে আসা অস্ত্রগুলো প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করার জন্য সংরক্ষণ করে রাখছে।
হেলাল বেগ আমার ছোট ভাই বেলালকেও প্রশিক্ষণের জন্য রিক্রুট করে নেয় । কিন্তু নানা কারণে তার ওপারে যাওয়ার প্রোগ্রাম বারবার স্থগিত হতে থাকে । একেক সময় একেকটা বাধা এসে সামনে দাঁড়ায় । অবশেষে ১৯৮৯ সালের শীতের মওসুমে বেলাল তার মিশনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায় ।
যাওয়ার আগে বেলাল আমাকে বলে গিয়েছিল-
“ভারত আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করছে, তাতে মনে হয়, তারা আমাদেরকে মানুষ নয়, পশু ভাবছে। এটা মূলত আমাদেরই কাপুরুষতা ও হীনম্মন্যতার পরিচয় । দেহ থেকে এই কাপুরুষতা ও হীনম্মন্যতার কম্বল আমাদের ছুড়ে ফেলতে হবে এবং ভারতের নিকট থেকে আযাদি ছিনিয়ে আনার জন্য লড়াই করতে হবে। ভারতের গোলামি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের জিহাদ করতে হবে। যুবকদের মধ্যে জিহাদের অদম্য স্পৃহা সৃষ্টি করতে হবে এবং পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ভারতের উপর আঘাত হানতে হবে।”
তার এই কথাগুলো তখন আমার কিছু-কিছু বুঝে এলেও বিষয়টির পুরো চিত্র আমার চোখের সামনে ছিল না। সত্য বলতে কি, আমিও ভারতের প্রতি বিতৃষ্ণ ছিলাম। ভারতের বিরুদ্ধে আমার অন্তরে এমন একটি স্ফুলিঙ্গ বিদ্যমান ছিল, যা মাঝে-মধ্যে দাউদাউ করে জ্বলে উঠত। পাকিস্তান অবস্থানকালে আমার এই স্ফুলিঙ্গ আরো অধিক প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে । আমার বিয়ের বয়স তখন বারো বছর।
কাশ্মির বীরাঙ্গনা pdf download শাওকিন কাশ্মিরী পিডিএফ টি ডাউনলোড করতে নিচে ডাউনলোড বাটন ক্লিক করুন।