আরজ আলী সমীপে pdf download আরিফ আজাদ pdf download |
একটু পড়ুন:
“ঈশ্বর সংক্রান্ত” শিরোনামের অধ্যায়ে আরজ আলী মাতুব্বর সাহেব বেশ কিছু আপত্তি তুলে এনেছেন ঈশ্বর তথা স্রষ্টাসংক্রান্ত। এই অধ্যায়ে আমি চেষ্টা করব বিষয়টি ক্লিয়ার করতে।
আরজ আলী সাহেব হিন্দুধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম এবং ইসলামধর্মে স্রষ্টার ধারণা দিতে গিয়ে
ইসলামের ব্যাপারে আপত্তি তুলে বলেছেন,
“মুসলিম ধর্মযাজকদের নিকট শোনা যায় যে, আল্লাহ তা'আলা আরশে কুরছীর ওপরে বসিয়া রেজওয়ান নামক ফেরেশতার সাহায্যে বেহেস্ত, মালেক নামক ফেরেশতার সাহায্যে দোযখ, জেব্রাইলের সাহায্যে সংবাদ এবং মেকাইলকে দিয়া খাদ্য বণ্টন ও আবহাওয়া পরিচালনা করেন। সর্বশক্তিমান বিশ্বজগতের কার্যপরিচালনার জন্য ফেরেশতার সাহায্যের আবশ্যক কী?”
প্রথমেই বলি, কোনো বিষয়ে কথা বলতে হলে সে বিষয়টির জ্ঞান অথেনটিক সোর্স থেকে নিতে হয়। ইসলাম সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান এতই শোনা কথার ওপর নির্ভরশীল যে তার কথার জবাব দেওয়া অনেকটাই সময়ক্ষেপণ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। তিনি বলেছেন, 'মুসলিম ধর্মযাজকদের থেকে শোনা যায়' এ কথাটি আপত্তিজনক।
তিনি নিজে সোর্স পড়ে না দেখে মন্তব্য করার মাধ্যমে নিজেকে মূর্খদের কাতারে ফেলবেন এটা আমরা ধারণাও করতে পারি না। তারপর তিনি বলেছেন, 'আল্লাহ তাআলা আরশে কুরসির ওপর বসিয়া তার একথাটিও একটি মিথ্যা ও জঘন্যতম জগাখিচুড়ি টাইপের কথা। আল্লাহ আরশে কুরসির ওপর বসেছেন এটা মুসলিমরা বলে না, তা ছাড়া আরশ ও কুরসি ভিন্ন দুটি জিনিস, আরশের সামনে কুরসি অতীব ক্ষুদ্র জিনিস। সে কুরসীতে আসমান-যমীন কয়েকটি মুদ্রার মতো।
দ্বিতীয়ত, ফেরেশতাদের নিযুক্ত করা নিয়ে আরজ আলী সাহেব অত্যন্ত শিশুসুলভ একটি দাবির উত্থাপন করেছেন এখানে। তাঁর কথার সারমর্ম হচ্ছে, আল্লাহ যেহেতু সর্বশক্তিমান, তাই তিনি কেন ফেরেশতাদের সাহায্য নেবেন বিশ্বপরিচালনায় ?
এখানে যে ভুলটি তিনি করেছেন তা হলো, ফেরেশতাদের তিনি আল্লাহর সাহায্যকারী ভেবে বসে আছেন। তিনি ধরেই নিয়েছেন যে আল্লাহ ফেরেশতাদের মুখাপেক্ষী। কিন্তু কুরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা'আলা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে,
আরজ আলী সাহেব এখানে ‘অধীনস্থ' আর 'সাহায্যকারী'-এর মধ্যে গুলিয়ে ফেলেছেন। ফেরেশতাদের দিয়ে তিনি এই কাজগুলো করাচ্ছেন মানে এটা নয় যে তিনি ফেরেশতাদের সাহায্য নিচ্ছেন; বরং এটাই ফেরেশতাদের জন্য ইবাদাত। তারা আল্লাহর এসব কমান্ড ফলো করবে—এটাই তাদের ইবাদাত। তাদের এই কাজের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে।
আমি চাইলেই আমার বাসার সকল কাজকর্ম নিজেই করতে পারি। কিন্তু আমার ইচ্ছে হলো যে, এসব আমি করব না। অন্যকে দিয়ে করাব। এরপর আমি যদি এমন অত্যাধুনিক একদল রোবট তৈরি করি যাদের কেউ আমার কাপড় ধুয়ে দেবে, কেউ কাপড় ইস্তিরি করে দেবে, কেউ আমার রান্নাবান্না করে দেবে, কেউ আমার রিডিং রুম আর বেড রুম গুছিয়ে দেবে, কেউ আমার ব্যবসায়ের হিসাবপত্র মিলিয়ে দেবে, কেউ বাগান পরিচর্যা করবে ইত্যাদি।
আমি যদি আমার বাসার এ সকল কাজ আমারই তৈরি অত্যাধুনিক রোবটকে দিয়ে করাই, তাহলে এর দ্বারা কি এটাই প্রমাণ হয় যে আমি আসলে আমার বাসার কাজকর্ম করতে অক্ষম? নাহ, এটা প্রমাণ হয় না; বরং এতে আমার সম্মান, ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আমারই তৈরি একদল সুপার রোবট দল যখন কেবল আমার নির্দেশনামতো সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করে যায়, তখন আমার বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, আর অসাধারণ সৃষ্টিশৈলী প্রকাশ পায়। আমি কিন্তু কোনোভাবেই আমার তৈরি রোবটের অধীন বা মুখাপেক্ষী নই; বরং তারাই আমার মুখাপেক্ষী।
আরজ আলী সমীপে pdf download করতে নিচে ডাউনলোড বাটন ক্লিক করুন।