একটু পড়ুন:
আব্বার মৃত্যুর ঠিক দু'দিন আগে আই.সি.ইউ-তে এক রােগী ভর্তি হলাে। তার স্বজনদের চিৎকার আর আহাজারিতে মনে হত যেন আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠতাে। পরে জানলাম রােগী সদ্য বিবাহিত এক যুবক। বিয়ে হয়েছে মাত্র ১৪ দিন। ব্রেইন স্ট্রোক করে লাইফ সাপাের্টে আছেন। রােগীর আত্মীয় স্বজন আর্তনাদ করে আকুতি জানাচ্ছে বারংবার ডাক্তার আপনি অন্তত ১০ পারসেন্ট আশা আছে আমাদের এই ভরসা দিন। আমরা স্পেশাল প্লেনে করে রােগীকে দেশের বাইরে নিয়ে যাবাে। ডাক্তাররা জানালেন ক্লিনিক্যালি আপনাদের রােগী ডেড। আমরা শুধু শুধু মিথ্যা আশ্বাস কেন দেব? যুবকটির আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলে জানলাম নতুন বউটি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে মাত্র।
স্বামীর অসুস্থতার কথা শুনে সেও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আর একটি ক্লিনিকে তাকে রাখা হয়েছে। যুবকের মা হার্টের অসুস্থতার কারণে অন্য এক ক্লিনিকে আছেন বেশ কিছুদিন ধরে। আর শােকাহত বাবাও বাকরুদ্ধ। বাবা-মা ও স্ত্রী কাউকে এখনাে শােনানাে হয়নি যুবকটির মৃত্যুর প্রকৃত খবর। আহা! এই নতুন দম্পতি কি কখনাে ভেবেছিল জীবনের শুরুতেই জীবন এত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাবে? কতইনা সুখ স্বপ্ন ছিলাে তাদের নতুন জীবনকে ঘিরে। আব্বার কবরের পাশে দাড়িয়ে মনে হল, যতদিন আব্বা বেঁচে ছিলেন পিঠে ঘা হয়ে যেতে পারে বলে মেডিকেটেড বেড, এটা ওটা কত কিছু দরকার হত।
আর আজকে আব্বাকে যখন সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে শুইয়ে দিলাম তখন কিন্তু কিছুই আব্বার সাথে কবরে গেল না। মাটির ঘর, মাটির বিছানা, সবই মাটি। তা হলে সারাটি জীবন যে আমরা পৃথিবীতে শুধু আমার আমার বলে এটা কিনি, ওটা সঞ্চয় করি, কিছুই তাে সাথে নিয়ে যেতে পারবাে না। তবে কেন মিথ্যে বালুর প্রাসাদ বানাই আমরা সাগর তীরে। মনে পড়লাে, ৮ দিন আগে যখন বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম মানসিকভাবে খুব বিধ্বস্ত এক অবস্থায়। আমার বড় মেয়েটি মায়ের ভূমিকা নিয়ে আমাকে তাড়াতাড়ি একটি হাত ব্যাগে প্রয়ােজনীয় জিনিস পত্র গুছিয়ে দিলাে।
আমি দেখলাম, ছােট্ট একটি ব্যাগের ৪ ভাগের ২ ভাগই খালি। মেয়ে আমাকে বার বার বললাে- আম্মু, দেখ তােমার জরুরি কিছু বাদ পড়লাে কি? আমি ব্যাগ খুলে চেক করে বললাম, না মা, সবই ঠিক আছে । আর কিছু লাগবে না । অবাক হয়ে দেখলাম, আমার প্রায় ১৭/১৮ বছরের সংসারে এত এত জিনিস । কিন্তু আজ আমার জরুরি মুহূর্তে নেবার মত কিছুই প্রয়ােজন নেই।
তখনই ঘুমন্ত বিবেক নড়ে চড়ে উঠলাে। নিজকে প্রশ্ন করলামতবে জীবনের এতটি বছর সংসার, এত ব্যস্ততা, এত কাজ, এত জিনিস পত্র কেনা... এর বেশির ভাগই কি নিরর্থক করলাম? নিরর্থক সাজালাম? হায়রে! অথচ এ ব্যস্ততার অজুহাতে আল্লাহর কাজে সাড়া দেবার সময়ই পেতাম না। আব্বার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কত স্মৃতি এসে ভিড় জমালাে বুকের ভেতর। আব্বা বলতেন, আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) নামে তােমার নাম রেখেছি।
বইয়ের নামঃ পরকালের প্রস্তুতি
লেখকঃ নূর আয়েশা সিদ্দিকা
লেখকঃ নূর আয়েশা সিদ্দিকা
সাইজ : ২.৯ মেগাবাইট
পৃষ্ঠা : ৭৩
পরকালের প্রস্তুতি pdf download করতে নিচে ডাউনলোড বাটন ক্লিক করুন।